আরবিসি ডেস্ক : রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় শনিবার তেঁজগাও কলেজের এক শিক্ষিকাকে টিপ পরার কারণে গালি দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁদ পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তির বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। তিনি তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার।
ইভটিজিং ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ তুলে গতকালই তিনি শেরে বাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী নারী শিক্ষকের স্বামী মলয় বালা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক।
লতা সমাদ্দারের অভিযোগ, পুলিশের পোশাক পড়া ব্যক্তি তাকে ‘টিপ পরছোস কেন’ বলে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয়। প্রতিবাদ করলে মোটরসাইকেলে থাকা সেই ব্যক্তি তার পায়ের পাতার ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যায়। এতে তিনি আহত হয়েছেন।
শেরে বাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, তেজগাঁও কলেজের একজন নারী প্রভাষকের কাছ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। কলেজে যাবার পথে সেজান পয়েন্টের পাশে ইভ টিজিংয়ের শিকার হন তিনি। পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। তবে ওই পুলিশ সদস্যের নাম বা পদবি জানাতে পারেননি ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। তবে একটি মোটরসাইকেলের নাম্বার দিয়েছেন তিনি। তদন্ত শুরু হয়েছে।
লতা সমাদ্দার বলেন, ‘আমি হেঁটে কলেজের দিকে যাচ্ছিলাম, হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন ‘টিপ পরছোস কেন বলেই বাজে গালি দিলেন। তাকিয়ে দেখলাম তাঁর গায়ে পুলিশের পোশাক। একটি মোটরবাইকের ওপর বসে আছেন। প্রথম থেকে শুরু করে তিনি যে গালি দিয়েছেন, তা মুখে আনা এমনকি স্বামীর সঙ্গে বলতে গেলেও লজ্জা লাগবে। ঘুরে ওই ব্যক্তির মোটরবাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তখনো তিনি গালি দিচ্ছেন। একসময় আমার পায়ের পাতার ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান। ’
ওই শিক্ষিকা বলেন, ‘সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনার পর থেকে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না। ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করলে আমাকে হুমকি দেয়। ঘটনাটি আমার কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। থানায় অভিযোগ করেছি। ’ তিনি বলেন, এর আগেও রাস্তাঘাটে বিভিন্ন সময় বাজে কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু পুলিশের পোশাক গায়ে এক ব্যক্তি যখন এ ধরনের আচরণ করলেন, তা সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না। ’
অভিযোগে বলা হয়, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক বাসা থেকে রিকশায় করে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে নামেন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার। সেখান থেকে হেঁটে তেজগাঁও কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন সেজান পয়েন্টের সামনে এক পুলিশ সদস্য স্টার্ট বন্ধ করে রাখা মোটরসাইকেলের (মোটরবাইক নম্বর ১৩৩৯৭০) ওপর বসেছিলেন। কপালে টিপ পরায় ওই পুলিশ সদস্য তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তার আচরণের প্রতিবাদ করায় তিনি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শিক্ষিকার গায়ের ওপর দিয়ে চালিয়ে দিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টা করেন। লতা সমাদ্দার সরে গিয়ে প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করেন। যদিও বাইকের নিচে পড়ে গিয়ে আঘাত পান।
লতা সমাদ্দার জানান, ঘটনার পর রাস্তার বিপরীত পাশে কর্তব্যরত তিনজন ট্রাফিক পুলিশের কাছে গিয়ে তিনি ঘটনাটি বর্ণনা করেন। এই তিনজনের মধ্যে একজনের নাম অভিজিৎ। তারাই থানায় অভিযোগ করতে পরামর্শ দেন। আশপাশের কয়েকজন লোক একটু দূর থেকে ঘটনাটি দেখছিলেন। তবে কেউ এগিয়ে আসেননি।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, শিক্ষিকার অভিযোগ পাওয়ার পর গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত চলছে। ওই ব্যক্তি পুলিশের কেউ কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কি ঘটেছে তা বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই করা হচ্ছে।
আরবিসি/০৩ এপ্রিল/ রোজি