• বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ হিসাব জমা দিতে হবে, মন্ত্রিপরিষদের নীতিমালা জারি পলিথিনের শপিং ব্যাগ উৎপাদনের বিরুদ্ধে ১ নভেম্বর থেকে অভিযান শুরু শিবিরের ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হবে বুধবার নাটোরে পাওনা ২০০ টাকা চাওয়ায় দোকানদারকে কুপিয়ে হত্যা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ রাজশাহীতে এক দফা দাবিতে নার্সদের কর্মবিরতি দায়িত্ব নেওয়ার পর আপনারা সুর পাল্টে কথা বলছেন: অন্তর্বর্তী সরকারকে ডা. জাহিদ রডে ঝুলছিল আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ, স্ত্রীর দাবি ‘হত্যা’ জানাজা থেকে ফেরার পথে যুবককে গলা কেটে হত্যা মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি আহত

চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ

Reporter Name / ১১৯ Time View
Update : রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : ধান-লিচুতে ভরপুর দিনাজপুর জেলা। এ জেলার অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। ধানের জেলা হিসেবে দিনাজপুরের সুনাম দীর্ঘদিনের। এ জেলায় আউশ, আমন ও বোরোসহ প্রতিবছর গড়ে ১৪-১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। তবে প্রথাগত ধানের আবাদ থেকে উচ্চমূল্যের এবং সুগন্ধি ধানের আবাদে ঝুঁকছেন দিনাজপুরের কৃষকরা। কয়েক বছরে জেলায় সুগন্ধি ধানের আবাদে এসেছে বড় পরিবর্তন। এসব ধান-চালের ভালো দাম পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ফলনও হয় বেশি। এসব কারণে দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ ৬ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ১৫০।

বিত্তবান কিংবা মধ্যবিত্তদের বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে পোলাও, বিরিয়ানি, ফিরনি, পায়েস থাকেই, আর সেই আয়োজনের মূল উপকরণ সুগন্ধি চাল। শুধু মধ্যবিত্ত নয়, নিম্নবিত্তরাও অতিথি আপ্যায়নে সুগন্ধি চাল ব্যবহার করেন। হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও সুগন্ধি চালের ব্যবহার বেড়েছে। সব মিলিয়ে সুগন্ধি চালের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী।

তবে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দামও বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোটা-চিকন সব ধরনের চালের দাম ওঠানামা করলেও সুগন্ধি চালের দাম সবসময় ঊর্ধ্বমুখী। কারণ মাঠপর্যায় থেকে বিভিন্ন কোম্পানি সুগন্ধি ধান কিনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তারা সেগুলো মিলে নিয়ে চাল করে। এ চাল প্যাকেটজাত করে চড়া দামে বিক্রি করা হয়।

ধানের জেলা হিসেবে খ্যাতি আছে দিনাজপুরের। বোরো কিংবা আমন, প্রতি মৌসুমেই ধান উৎপাদনে শীর্ষ জেলাগুলোর একটি দিনাজপুর। প্রাকৃতিক কারণে এখানে কাটারিভোগ ধানের ফলন বেশি হয়। চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরাও সুগন্ধি ধান চাষে ঝুঁকছেন। এখানকার উৎপাদিত বাদশাভোগ, কালিজিরা, চিনিগুঁড়া (ব্রি-৩৪), কাটারিভোগ, জিরা নাজির, পাইজাম ও বাংলামতি চালের কদর এখন বিশ্বজোড়া। ইতোমধ্যে দিনাজপুরের কাটারিভোগ ও কালিজিরা চাল জিওগ্রাফিক্যাল আইডেনটিফিকেশন (জিআই) পেয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বও করছে।

দিনাজপুরের সদর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও চিরিরবন্দর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি ধান-চাল আবাদ ও উৎপাদন হয়। স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে সুগন্ধি ধান আবাদ বাড়ানো নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা দেখা দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের এ ধরনের ধানের আবাদ বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ বাড়তে শুরু করেছে। সেই অর্থবছর জেলায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধান আবাদ হয়। ৮৬ হাজার ৯৯৪ টন সুগন্ধি চাল উৎপাদন করা হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবেই প্রতিবছর সুগন্ধি ধানের আবাদের আওতায় জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বেড়েই চলেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলায় ৯০ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ করা হয় এবং উৎপাদন হয় ২ লাখ ১৬ হাজার টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলায় ১ লাখ ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার টন। চলতি অর্থবছর আবাদ ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে এ অঞ্চলের কৃষকদের আধুনিক চাষ পদ্ধতি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা কম। সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যপূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী জাত ও বোরো মৌসুমে সুগন্ধি ধানের জাত সম্পর্কে কৃষকের জ্ঞান সীমিত। সুগন্ধি ধানের উচ্চফলনশীল জাতের বীজ পাওয়া কষ্টকর। স্থানীয় কৃষকরা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে সংরক্ষিত বীজ ব্যবহার করছেন। এতে ফলন তুলনামূলক কম হয়। এ ছাড়া সুগন্ধি ধানের বিভিন্ন রোগবালাইয়ের (যেমন: গোড়া পচা, গলা পচা, শীষকাটা লেদা পোকা ও বাদামি গাছফড়িং) আক্রমণে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কৃষকদের জ্ঞান ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে।

কৃষকরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেচ প্রদানের ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভালো ফলনের আশায় অতিরিক্ত মাত্রায় ইউরিয়া, অন্যান্য সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন অনেকেই। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত সুগন্ধি ধান বেপারি, পাইকার কিংবা ফড়িয়াদের কাছে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। ধান উৎপাদন আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারেও ঘাটতি রয়েছে। এতসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার পরও স্থানীয় কৃষকদের সুগন্ধি ধান-চাল উৎপাদনে আগ্রহ রয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ধানের উন্নত জাত ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় সাধনের জন্য পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) তাদের ‘সুগন্ধি ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন’ শীর্ষক ভ্যালু চেইন প্রকল্প চালু করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার সুগন্ধি ধানচাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার শেখপুরা গ্রামের কৃষক শরীফউদ্দিন সুগন্ধি ধান আবাদ করেন। তিনি বলেন, আগে মুষ্টিমেয় অবস্থাপন্ন কৃষক প্রতিবছরই অল্প পরিমাণ জমিতে সুগন্ধি চাল হিসেবে কাটারি, চিনিগুঁড়া ও কালোজিরা ধানের আবাদ করতেন। এখন অন্যান্য সাধারণ ধান আবাদের পাশাপাশি ব্যাপক পরিসরে দিনাজপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলায় আবাদ হচ্ছে সুগন্ধি ধান। সুগন্ধি ধানের আবাদের জন্য এখন সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষকরা প্রতি মৌসুমে আলাদা করে জমি বরাদ্দ রাখছেন।

সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের কৃষক খাদেমুল ইসলাম লিটন বলেন, তুলনামূলক মোটা ধানের চেয়ে কয়েক মৌসুমে সুগন্ধি চিকন ধানের আবাদ করে লাভ পেয়েছি বেশি। মোটা ধানের চেয়ে চিকন ধান বস্তাপ্রতি তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য মোটা ধানের আবাদ কমিয়ে দিয়েছি। সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকেই প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সুগন্ধি ধানের আবাদ আরও বাড়াচ্ছি। আবার বাজারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা নিচ্ছি। একটি করে সারিতে রোপণের ফলে রোগ ও পোকামাকড় কম হচ্ছে। সার ও কীটনাশক কম লাগছে। ফলন বেশি ও সেচ খরচ কম হয়েছে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী জানান, কৃষকরা এখন মোটা চাল থেকে আর আতপ করছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সুবিধা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। তা ছাড়া মানুষের আয় বৃদ্ধির কারণে ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে তারা এখন সুগন্ধি চালের ভাত খেতে পছন্দ করছেন। এ কারণে সুগন্ধি চালের আবাদ ফলন ও চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উত্তরের খাদ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত দিনাজপুর জেলা এখন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, রুচিও উন্নত হয়েছে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। এখন মোটা চালের পরিবর্তে চিকন চালের ভাত খেতে পছন্দ করছে মানুষ। এ কারণে মোটা ধান আবাদ করে কৃষক দাম পাচ্ছেন না। তারা সুগন্ধি ও চিকন ধান আবাদে ঝুঁকছেন।

২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে বাড়তে থাকে সুগন্ধি ধানের আবাদ। সে বছর উৎপাদিত হয় ৮৬ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল। এরপর ধারাবাহিকভাবে সুগন্ধি ধানের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল।

আরবিসি/৩ এপ্রিল/মানিক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category