• মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ অপরাহ্ন

শত্রুতার বিষে শেষ ৫০ লাখ টাকার মাছ

Reporter Name / ১২৩ Time View
Update : বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মুগাইপাড়া গ্রামে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের দিঘীতে বিষ দিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকা মূল্যের মাছ নিধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কে বা কারা ওই দিঘীতে বিষ প্রয়োগ করে। বিষের প্রভাবে ভোর থেকেই দিঘীর মাছগুলো মরে ভেসে উঠে। এর পর আশপাশের গ্রামের লোকজন মারা যাওয়া অধিকাংশ মাছ তুলে নিয়ে যায়।

পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র ও কাগজপত্র দেখে জানা গেছে, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে এক বছর আগে দিঘী খনন করেন মুগাইপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম কবিরাজের ছেলে মাসুদ রানা, মারুফ হোসেন ও মাহামুদ সরকার অনিক নামের তিনজন। দিঘী খননের মূল উদ্যোক্তা মাসুদ রানা হলেও তার অংশের কাগজপত্র করা হয় তার পিতা আবুল কাশেমের নামে।

পরে দিঘী নিয়ে তিন অংশিদারের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধের জের ধরে দিঘীতে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলা হয়। তিন অংশিদারের বিরোধের কারণে দিঘীর লিজ বিক্রি করে দেন তারা। লিজটি কিনে নেন পাশের গ্রামের বাসিন্দা ও আউচপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জান মোহাম্মদ।

সূত্রমতে, প্রথমে মারুফ হোসেন ও মাহামুদ সরকার অনিক তাদের অংশ ৪০ লাখ টাকায় জান মোহাম্মদের কাছে বিক্রি করে দেয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর লিজ কেনা বেচার দালিল সাক্ষর হয়। এর তিনদিন পর গত ১৫ নভেম্বর অপর অংশের মালিক মাসুদ রানার বাবা আবুল কাশেম কবিরাজ ছয় লাখ টাকায় তার অংশ জান মোহাম্মদের কাছে বিক্রি করে দেন। যাতে স্বাক্ষি হিসেবে সাক্ষর করেন মাসুদ রানা ও তার চাচা আনিসার রহমানসহ পাঁচজন।

মাসুদ রানা অগ্রনী স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। স্কুলের ভবন নির্মাণের ঠিকাদারের কাছে চাঁদাবাজির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি সাময়িক বরখাস্ত হন। বর্তমানে তিনি বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি প্রতারণার মামলাও রয়েছে।

সূত্রমতে, লিজের শর্ত হিসেবে প্রতি বিঘা জমির জন্য কৃষকরা পাবেন বছরে ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে গত ২৫ জানুয়ারি জান মোহাম্মদ ৫৫ বিঘা আয়তনের দিঘীর জমির মালিক ৮৫ জন কৃষকে তাদের এক বছরের লিজের অর্থ ১১ লাখ টাকা পরিষদ করেন। এছাড়াও কৃষকদের পূর্বের বাকি ছিল তিন লাখ টাকা। যা পরিষদ করা হয়।

জান মোহাম্মদ জানান, প্রথমে দিঘী খননকারিদের কাছ থেকে লিজ নিয়েই তিনি পোনা মাছ ছাড়তে শুরু করি। সেখানে মোট ৮৫ মন পোনা মাছ ছাড়া হয়েছে। যার মূল্য প্রায় সাত লাখ টাকা।

তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি পরাজিত হয়। এর কিছুদিন পর মাসুদ রানা ওই দিঘীতে মাছ চাষ বাবদ আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ অর্থ দিতে অস্বীকার করায় দিঘীটি জোরপূর্বক দখলে নিতে চেষ্টা চালায় মাসুদ রানা ও তার লোকজন। এ অবস্থায় নিরাপত্তার চার পাশে সিসিটিভির ক্যামেরা বসানো হয়।

জান মোহাম্মদ বলেন, গত ২৫ মার্চ দিঘীতে হামলা চালিয়ে ৫১টি সিসিটিভির ক্যামেরা ভাঙচুর করে সেগুলো নিয়ে যায়। এছাড়াও ডিভিডি ও মনিটর এবং তারসহ সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দিঘীর পাহারাদার মোজাফ্ফর হোসেন পাইক বাদি হয়ে বাগমারা থানায় অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ মামলা রেকর্ড করেনি।

উল্টো এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে আমাদের উপর ১ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা চুরি ও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা দেয়া হয়। সেই মামলায় ৭৩ বছর বয়সের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষককে ধরে চালান দেয় পুলিশ। এ ঘটনার কয়েকদিন পর দিঘীতে রাতের আধারে বিষ প্রয়োগ করা হয়।

বিষয়টি জানতে মাসুদ রানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুকুরের লিজ নিয়ে কথা বলার জন্য তাদের বাসায় ডেকেছিলের জান মোহাম্মদ। যেখানে আমার অংশের মূল্য হবে ৩৫ লাখ টাকা সেখানে ছয় লাখ টাকার দলিল করে সেখানে আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়েছে।

বাগমারা থানার ওসি (তদন্ত) আফজাল হোসেন বলেন, দিঘীটির মালিকানা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। দু-তিনদিনের মধ্যে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করা হবে।

তিনি আরও বলেন, দিঘীতে কে বা কারা বিষ প্রয়োগ করেছে সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। দিঘীটির বিষয়ে উভয় পক্ষ একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন। সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আরবিসি/৩০ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category