আরবিসি ডেস্ক : একই ক্লাসে লেখাপড়ার সুবাদে পরিচয়। গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। একসঙ্গেই করতেন কোচিং। ওসির মেয়ে হলেও প্রতিদিন বান্ধবীকে ডেকে নিয়ে কোচিংয়ে যেতেন। প্রতিদিনের মতো সেদিনও বান্ধবীকে ডাকতে যান। কিন্তু ঘরে ঢুকতেই দেখে ফেলেন প্রেমিকের সঙ্গে বান্ধবীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত।
এরপর থেকেই সহজ-সরল মেয়েটির জীবনে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়। মারধর, শ্লীলতাহানি, এমনকি কুৎসাও রটানো হয়। আর এসব কাজে প্রেমিক ছাড়াও সহায়তা করছেন সেই বান্ধবীর মা।
ঘটনাটি বরিশাল নগরীর। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে চারজনের বিরুদ্ধে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা।
অভিযুক্তরা হলেন- নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মতাসার এলাকার ২২ বছর বয়সী তাওসিফ মাহমুদ স্বাধীন, ২৩ বছরের আসাদ ইসলাম, নগরীর বগুড়া রোড দিলবাগ গলির ৪৫ বছরের ফাতেমা খাতুন চম্পা ও তার মেয়ে ১৭ বছরের সাবিকুন নাহার শশি।
ভুক্তভোগীর নাম আবিরা ছরোয়ার শেফা। ১৬ বছর বয়সী শেফা আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ারের মেয়ে। চাকরির সুবাদে গলঝাড়ায় থাকেন গোলাম ছরোয়ার।
তবে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার কারণে নগরীর কাজীপাড়া লুৎফর রহমান সড়কের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন পরিবার। শেফা নগরীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। এবার তিনি এসএসসি পরীক্ষা দেবেন।
লিখিত অভিযোগে শেফার মা মৌসুমী আক্তার উল্লেখ করেন, শেফা ও শশি একই ক্লাসে লেখাপড়া করেন। সেই সুবাদে তারা একসঙ্গে কোচিং করতেন। কোচিং সেন্টার শশির বাসার কাছাকাছি। কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পথে প্রায়ই শশিকে ডেকে নিয়ে একসঙ্গে যেতেন শেফা।
কয়েক মাস আগে শশিকে ডাকতে শেফা বাসায় যান। এ সময় শশি ও আসাদকে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে দেখতে পান শেফা। এ সময় শশি ও আসাদ কাউকে কিছু না বলার জন্য শেফাকে অনুরোধ করেন। শেফা বিষয়টি গোপন রাখেন। তবে শশি ও আসাদ বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেন।
একপর্যায়ে শেফাকে ফাঁদে ফেলতে ফন্দি আঁটেন তারা। এতে শশির মা চম্পাও সহায়তা করেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল বন্ধু স্বাধীনকে দিয়ে শেফাকে প্রেমের প্রস্তাব দেবেন। এরপর শেফার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তারা ধারণ করে রাখবেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, পরিকল্পনা মতো বন্ধু স্বাধীনকে শেফার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন আসাদ। এর কিছুদিন পর শেফাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন স্বাধীন। তবে শেফা রাজি হননি। এরপর থেকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে শেফাকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন স্বাধীন।
গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর স্কুল থেকে ফেরার পথে কয়েকজন সহযোগী নিয়ে শেফার পথরোধ করেন স্বাধীন। ওই সময় শেফাকে তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেন। শেফা রাজি না হলে স্বাধীন টানাহেঁচড়া করেন। একপর্যায়ে শেফাকে মারধর করেন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাতও দেন।
শেফার চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন স্বাধীন। এরপর ফের শেফাকে উত্ত্যাক্ত করতে শুরু করেন।
৩০ নভেম্বর ক্লাসের পরীক্ষা দিতে স্কুলে যান শেফা। পরীক্ষা শেষে শেফাকে ডেকে স্কুলের সামনে নিয়ে যান শশি। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন শশির মা চম্পা, আসাদ ও স্বাধীন। এ সময় তাদের দেখে শেফা চলে যেতে চাইলে পথরোধ করা হয়। একপর্যায়ে তারা মারধর করেন। ওড়না ও জামা কাপড় ধরে টানাহেঁচড়া করেন।
শেফার মা মৌসুমী আক্তার বলেন, শেফার বাবাকে এসব ঘটনা জানালে তিনি আমাদের ধৈর্য ধরতে বলেন। পাশাপাশি শেফার স্কুলের এক শিক্ষককে বিষয়টি জানান। তবে এরপর থেকে স্বাধীন, আসাদ, চম্পা ও তার মেয়ে শশি ভিন্ন কৌশলে শেফাকে হয়রানি শুরু করেন।
স্কুল ও কোচিং সেন্টারে শেফার নামে তারা কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন কথা এবং নানা ধরনের কুৎসা রটান। সম্প্রতি হয়রানির মাত্রা বেড়ে গেছে। লজ্জায় শেফা বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কোচিং সেন্টারে যেতে পারছেন না। শেফা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। শেফাকে সুস্থ করতে মানসিক চিকৎসক দেখানো হয়েছে। তবে এখনো তিনি বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
শেফার বাবা আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার বলেন, প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ভেবেছিলাম স্কুল শিক্ষককে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানোর কারণে স্বাধীন, আসাদ, চম্পা ও তার মেয়ে শশি আমার মেয়ে শেফাকে হয়রানি করা থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া বিষয়টি জানাজানি হলে লোকে নানা কথা বলবেন। কিন্তু অবস্থা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
বরিশাল কতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম জানান, আগৈলঝাড়া থানার ওসি গোলাম ছরোয়ারের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরবিসি/৩০ মার্চ/ রোজি