স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী নগরের নিউ মার্কেটের সামনে জুতা-স্যান্ডেল ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম (২৬) খুনের পর ওই এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে বুলডোজার দিয়ে ফুটপাতের ওপর গড়ে ওঠা অন্তত ২৫টি দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।
নিউমার্কেটের উত্তর পাশেই মহানগর তাঁতি লীগের কার্যালয়। ফুটপাত দখলকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডে তাঁতি লীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদের পর সেখানকার ব্যবসায়ীরা তাঁতি লীগের কার্যালয়ও ভেঙে ফেলার তাগাদা দেয়। তখন সেখানে সংগঠনটির আহ্বায়ক আনিসুর রহমানসহ কয়েকজন এসে নিজেরাই মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান।
পুলিশ তাদের জানায়, উচ্ছেদ করা তাদের কাজ নয়। একপর্যায়ে সেখানে হট্টগোল হলে পুলিশ আহ্বায়কসহ দুজনকে ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
গত ২১ মার্চ রাতে নিউ মার্কেটের সামনের ফুটপাতে নিজের দোকানেই ছুরিকাঘাতে আহত হন রিয়াজুল। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি ফুটপাতে জুতা-স্যান্ডেল দোকান চালাতেন। ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আহত হন রিয়াজুলের ভাই রিংকু। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২০ হাজার টাকা চাঁদা না দেয়ায় তাদের ছুরিকাঘাত করা হয় বলে তাদের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়।
সেদিন রাতেই এ ঘটনায় নিহত রিয়াজুলের বাবা মধু মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, নগরের ষষ্ঠীতলা এলাকার সাঈদ শেখের ছেলে রানা শেখ (৩০) ও রনি শেখ (২৬), রতনের ছেলে নাঈম (২৬), গৌরহাঙ্গা এলাকার আনুর ছেলে রিমন (২৪) ও দড়িখড়বনা এলাকার হাসুর ছেলে নাঈম (৩৫)। এ ছাড়া আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ষষ্ঠীতলা এলাকার নাঈমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত রিয়াজুলের পরিবারের দাবি, ২০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে তাঁতি লীগের রানা ও রনি কয়েক দিন ধরে ফুটপাত থেকে তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছিলেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ২১ মার্চ রাত পৌনে ৮টার দিকে দোকানে গিয়েই রিয়াজুল ও রিংকুর ওপর হামলা করেন তারা।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ফুটপাতকে কেন্দ্র করেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সেটি উচ্ছেদ করেছে।
তাঁতি লীগের আহ্বায়ককে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে একাধিক গ্রুপ আছে। একটি গ্রুপ নিজেরাই তাদের কার্যালয় ভাঙার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সেটা তাদের কাজ নয়। এ নিয়ে সেখানে হট্টগোল হলে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করে। তাদের থানায় এনে পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ফুটপাতের ব্যবসায়ী রিয়াজুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ করার পর সেখানকার ব্যবসায়ী বলেন, সামনে রমজান মাস। একটি হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ১০০ পরিবার পথে বসে গেল।
নিহত রিয়াজুলের বোন বৃষ্টি আক্তার বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁতি লীগের ওই দুই ভাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারল না। উল্টো তাদের দোকানগুলোই ভেঙে দিল।
ফুটপাতে জুতা ব্যবসায়ী আলামিন ও আকাশ বলেন, ফুটপাত ভেঙে ফেলার বিষয়টি আগে থেকে তাঁদের বলা হয়নি। রমজান মাসকে সামনে রেখে তারা দোকানে অনেক বিনিয়োগ করেছেন। এখন তারা সেসব মালপত্র কীভাবে বিক্রি করবেন? পরিবার চালাবেন কী করে? তারা সামনের রমজান মাসটা সময় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইমরানুল হক বলেন, তারা নিয়মিতই ফুটপাত দখলমুক্ত করার কাজ করেন। যেহেতু সেখানে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তাই সেটা ভেঙে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নিউমার্কেটের উত্তর পাশের ফুটপাত ভাঙা হয়নি। কারণ, তার পাশে দারুচিনি নামে একটি ভবনের নির্মাণ হচ্ছে। ওই ভবনের কাজ শেষ হলেই উত্তর পাশের ব্যবসায়ীদের ওই ভবনের একটি অংশে পুনর্বাসন করা হবে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরবিসি/২৭ মার্চ/ রোজি