মানিক হোসেন : মেলা মানেই বাহারী চাহিদা পূরনের উৎস। প্রয়োজন মেটাতে ও মন ভালো করতে মেলার জুড়ি নেই। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে রাজশাহীর কালেক্টরেট মাঠে শুরু হয়েছে উদ্যোক্তা মেলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্যোক্তারা এসেছেন এই মেলায়। তাদের উৎপাদিত বাহারী পণ্যের পসরা সাজিয়ে নানা ভাবে ক্রেতাদের আকর্ষণ করছেন। আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা এবং দর্শণার্থীদের আনাগোনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে এই মেলা।
মন মাতানো হরেক রকম জিনিসপত্রের সমারোহে ভরপুর মেলার প্রতিটি স্টল। সময় কমে আসায় নগরীর কালেক্টরেট মাঠে সন্ধ্যে নামলেই জমে উঠছে মেলা প্রেমীদের ভিড়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে ১৭ মার্চ-এ এই মেলার উদ্বোধন করা হয়। এই মেলাটি চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলবে মেলার কার্যক্রম।
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ফুটে ওঠে ক্রেতা বিক্রেতাদের উৎসবমুখর ও প্রাণবন্ত অনুভূতির চিত্র। প্রতিদিন বিভিন্ন পেশার মানুষ কেনাকাটার জন্য আসছেন এই মেলায়।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন রকমের পন্য নিয়ে ঢাকা, বরিশাল, বান্দরবান টাঙ্গাইল, চাাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্যোক্তারা এখানে এসেছেন। দৃষ্টি আকর্ষণ করছে জিভে জল নিয়ে আসার মত মুখরোচক আচার। যেমন আম, জলপাই, রসুন, চালতা, বরই তেতুল মিক্সড, রসুন তেতুল মিক্সড আচার । এছাড়াও ছোট বড় সবার জন্য রান্না করা খাবার যেমন, কলিজা সিঙ্গাড়া, লুচি তরকারি, চিকেন ফ্রাই, চিকেন বার্গার, চিকেন ফুচকা, খাসির হালিম, চাওমিন (চিকেন), পটেটো রোল, তেল পিঠা, পাটি সাপটা, বুট ভুনা, জর্দ্দা পোলাও, আইসক্রিম, চা, কফিসহ বিভিন্ন রকমের খাবার।
গৃহিনীরাও হেঁশেল সাজাতে দৃষ্টিনন্দন কাঠের, প্লাস্টিকের, পাটের ব্যবহার্য জিনিসপত্র কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন এই মেলায়।
মেলায় এসে সাদিয়া জাহান উর্মি একজন জানান, মেলায় এসেছি হেঁসেলের কাজের জন্য কাঠের তৈরি কিছু জিনিসপত্র কিনতে। চোখে পড়ছে কাঠের তৈরি চিরুনী, পুতুল, বেলন, চামচ, ঘুটনি, বসার জন্য পিড়েসহ নাম না জানা তৈজস পত্র। দুইটা পিড়ে কিনলাম, পাটের তৈরি ব্যাগও কিনেছি। ভালোই লাগছে।
দর্শনার্থী নিশাত বলেন, তার মন ভালো করতেই এই মেলায় ঘুরতে এসেছেন। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী দেখে অনেক কিছু কিনেও ফেলেছেন।
নওগাঁ থেকে আগত ক্রেতা আব্দুল কাদের জানান, ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় হাতের কাজ করা পোশাক পাওয়া খুব কষ্টের বিষয়। এই মেলায় এসে পণ্যগুলো দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
দ্রব্যমূল্য কম হওয়ায় কিছু পোশাক কিনেছি।
কারুবিপনী, আঁচার কর্ণার, রিফাহ’স ক্রাফট কালেকশন, সপ্তরং বুটিকস, প্রকাশ বুটিক, শিল্প অঙ্গনা, পাট বাজার জুট ক্রাফট, চাঁপাই ম্যাংগো আচার কর্ণার, বর্না কিচেন ও গার্মেন্টস, প্রিমিয়াম শপ, দেশীয় পণ্যের সমারোহে মঙ্গলা, ডিজাইন কালেকশন, সোহেলী বুটিক্স ও ব্লক বাটিক হাউজ, বাঁধন ফুডসহ মোট ৭৪ টি দোকান ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিচ্ছেন। এই দোকানগুলোতে সৌখিন মনের মানুষদের জন্য আকর্ষণীয় ও আধুনিক ডিজাইনের হ্যান্ডপেইন্টেড ও ব্লক বাটিকের বেডসিট, ওড়নামেট, হ্যান্ডিক্রাফট, থ্রি-পিস, শাড়ী, পাঞ্জাবী, টপস, কুশন কাভার, পর্দা, বাচ্চাদের অত্যাধুনিক ড্রেস, কাপল ড্রেস ও কম্বো ড্রেস, পাটের তৈরি ব্যাগ সাজিয়ে রেখেছেন দোকানীরা।
বিক্রেতারা জানান, এই মেলায় তাদের কাঙ্খিত চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
এই মেলার দায়িত্বে থাকা কমিটির সদস্য ও ওয়েব রাজশাহীর সভাপতি আঞ্জুমান আরা পারভীন (লিপি) জানান, সরকার কর্তৃক নির্দেশনা অনুযায়ী বেকারত্ব ঘুচাতে এই মেলার আয়োজন। আর এই মেলায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের স্টল রয়েছে।
আমরা আশাবাদী যে, অল্প সময়ে ঘরে ঘরে উদ্যোক্তা তৈরি হবে। মনের খোরাক মেটাতে প্রতিবছরই উদ্যোক্তাদের এই মেলার আয়োজন করতে উৎসাহ দিচ্ছেন মেলাপ্রেমীরা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন এবং রাজশাহী জেলাপ্রশাসকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা উদ্যোক্তাদের কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।
আরবিসি/২৫ মার্চ/ রোজি