এর আগে মঙ্গলবার (২২ মার্চ) এ মামলায় প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায় ঘোষণার জন দিন ধার্য করে দেন। রায়ের বিষয়টি প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের শুনানি করেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর এ মামলায় প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ করে আদেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এ রায়ের দিন ঠিক করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরা এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। চূড়ান্ত যুক্তিতর্কে প্রসিকিউশন দুই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চায়। আর আসামিপক্ষ অভিযোগ থেকে আসামিদের খালাস চায়।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন বলেন, মামলাটি ২০১৫ সালের। পরে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। চার আসামির মধ্যে আব্দুল্লাহ আল বাকী এবং জহিরুল ইসলাম ওরফে টিক্কা খান নামের দুই আসামি বিচারাধীন অবস্থায় মারা যান।
রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়, ফর্মাল চার্জ দাখিল হয় ওই বছরের ১৯ মার্চ। একই বছরের ৯ মে অভিযোগ আমলে নেন আদালত। ২০১৮ সালের ৫ মার্চ অভিযোগ গঠন হয়, ১৫ মার্চ থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু। ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয় এবং মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয় ওই বছরের ৩ নভেম্বর থেকে। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় ১১ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়।
এ মামলার চার আসামির মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর গ্রামের খালেক মণ্ডল (৭২) গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন এবং একই উপজেলার দক্ষিণ পলাশপোল গ্রামের খান রোকনুজ্জামান (৬৪) এখনো পলাতক রয়েছেন। মামলার অপর দুই আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে টিক্কা খান (৬৫) গ্রেফতার না হলেও পলাতক অবস্থায় মারা যান আর গ্রেফতারের পর জামিনে থাকা অবস্থায় মারা যান বুলারটি গ্রামের এম আবদুল্লাহ আল বাকি (১০২)।
এর আগে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ আব্দুল খালেক মণ্ডলসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। অভিযোগ গঠনকালে মুক্তিযুদ্ধকালীন আটক করে নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আমলে নেন আদালত। এর মধ্যে রয়েছে ৬ জনকে হত্যা, ২ জনকে ধর্ষণ, ১৪ জনকে শারীরিক নির্যাতন। পরে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জামা দেওয়া ছয়টি অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় মঙ্গলবার (২২ মার্চ) মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজাকার বাহিনী গঠন করে এর নেতৃত্ব দেন খালেক মণ্ডল। এরপর অন্য আসামিদের নিয়ে তৎকালীন সাতক্ষীরা সদর মহকুমা এলাকায় এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। ২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদরাসায় বৈঠকের সময় খালেক মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৫ অগাস্ট তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
শিমুলবাড়িয়া গ্রামের রুস্তম আলীসহ পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২ জুলাই খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন শহীদ রুস্তম আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম গাজী। আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হলেও প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে ছয়টি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।