এক সময়ের অপেক্ষাকৃত বিচ্ছিন্ন্ ও রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে খ্যাত রাজশাহীর বাগমারায় বেড়েছে শিক্ষার বিস্তৃতি। জেলায় শিক্ষা বিস্তারে সবচেয়ে এগিয়েছে এখন বাগমারা উপজেলা। মেধা চর্চাতেও এগিয়েছে বাগমারা উপজেলার শিক্ষার্থীরা। বর্তমান সরকারের সময়ে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে এ উপজেলায়। এক সময় যে উপজেলায় প্রাথমিকের গন্ডি পেরুনো ছিলো দুস্কর তবে সব প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে এ উপজেলার ঘরে ঘরে এখন পৌছেছে শিক্ষার আলো।
এসবের পেছনে রয়েছে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের গড়া সালেহা ইমারত ফাউন্ডেশনে প্রানান্ত চেষ্টা। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্সায় অনুপ্রেরণায় গত দেড় যুগ ধরে প্রতিযোগীতা মুলকভাবে এগিয়ে চলেছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিবছর মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রেরণা যোগাতে ব্যপক সংবর্ধনা ও শিক্ষাবৃত্তির ফলে এ উপজেলায় বেড়েছে শিক্ষার হার।
বিস্তীর্ণ জনপদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় আগ্রহ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সালেহা ইমারত ফাউন্ডেশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এর ফলও মিলেছে। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। সেই কথা চিন্তা করেই পিতা-মাতার নামে এই ফাউন্ডেশন স্থাপন করেন বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই ২০০৬ সাল থেকে শিক্ষায় অনুপ্রেরণা যোগাতে চালু করা হয়েছে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা। প্রায় দেড় যুগ ধরে বিভিন্ন পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করে আসছে। এর ফলে ঘরে ঘরে শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে শনিবার এ উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এবার ২০২০ সালের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১২০০ শিক্ষার্র্থকে ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সকালে উপজেলার ভবানীগঞ্জ নিউ মার্কেট মিলনায়তনে এ সংবর্ধনা প্রদান করেন এমপি এনামুল হক। এমপি এনামুল হক বলেন, ২০০৬ সাল থেকে সালেহা-ইমারত ফাউন্ডেশন বাগমারার কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়ে আসছে। এলাকায় মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরী ও ভালো ফলাফলে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ফলে এলাকার কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয় প্রতিযোগিতা, বাড়তে থাকে কৃতি ও মেধাবীদের সংখ্যা। কৃতি শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের আনুষ্ঠানিক ভাবে সংবর্ধনা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমপি এনামুল হক। এসময় অন্যদের মধ্যে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ন কবীর, এনাগ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তহুরা হক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোসলেহ উদ্দিন, বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যাস অনিল কুমার সরকার বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে কৃতি শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানর শিক্ষক প্রতিনিধি ও অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গোলাম সারওয়ার আবুলের পরিচালানয় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ভবানীগঞ্জ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হাতেম আলী, ভবানীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হাতেম আলী, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সৈয়দা ময়েজ উদ্দীন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিরাজুম মনিরা, তাহেরপুর কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জাহেদুর রহিম, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ কুমার প্রতীক দাশ রানা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডল, আফতাব উদ্দীন আবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দীন সুরুজ, আসাদুজ্জামান আসাদ, দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আক্তার বেবী, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কহিনুর বানু, সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগম, যুব মহিলা লীগের সভাপতি প্রভাষক শাহিনুর খাতুন, যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম মীর সহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে উপজেলার এসএসসি ও এইচএসসিতে সেরা ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও চেক প্রদান করা হয়।
এমপি এনামুল হক বলেন, শিক্ষা-দিক্ষা থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কৃতি থেকে ক্রীড়া সব সেক্টরেই লেগেছে উন্নয়নের ছাপ। যে উপজেলার নাম শুনলে এক সময় শিউরে উঠতো মানুষের প্রাণ, সেই বাগমারায় জীবন এখন বদলে গেছে। গ্রামে গ্রামে লেগেছে আলোকছটা। যেখানে নির্মমতার ভয়ে স্কুল কলেজে যেতে পারতো না শিক্ষার্থী, সেখানে এখন কেবলই দলবেধে শিক্ষার্থীদের স্কুল যাত্রার চিত্র।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বদলে যেতে থাকে বাগমারার দৃশ্যপটও। সারা বছর বিভিন্ন ধরণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা মূলক কার্যক্রম চলে এখন এখানে। এরই মধ্যে গ্রাম থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে সড়ক। প্রতিষ্ঠা হয়েছে অসংখ্য স্কুল-কলেজ মাদ্রাসা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী এনামুল হকের ঐকান্তিক চেষ্টায় মুলত: বদলে গেছে এখানকার অতিত চিত্র। ফলে, ছাত্র-ছাত্রীরা সামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি পড়ার টেবিলে মনোনিবেশ করছে। এতে কয়েব বছরের ব্যবধানে ঘটেছে শিক্ষার বিস্তৃতি। বেড়েছে শিক্ষার হার।
আরবিসি/১৯ মার্চ/ রোজি