আরবিসি ডেস্ক : দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত রয়েছে, কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই। কোনও অসাধু ব্যবসায়ীকে সুযোগ নিতে দেওয়া হবে না। দেশব্যাপী প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে পণ্যের সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা হলে বা পণ্য অবৈধ মজুত করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি অসাধু ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মনে রাখবেন সরকারের হাত অনেক বড়। সরকারের চেয়ে অন্য কারও হাত বড় নয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বুধবার (২ মার্চ) বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত সভায় এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সব ভোজ্য তেল বোতল বা প্যাকেটজাত করা হবে এবং নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় নিশ্চিত করা হবে। নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে কোনও পণ্য বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং মাঠ প্রশাসন বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। উৎপাদনকারী এবং ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় সবকিছু করা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার কার্ড বিতরণ করে টিসিবি’র মাধ্যমে সারা দেশে এক কোটি মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে চিনি, ভোজ্য তেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা বিক্রি করবে। এতে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন।
পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের চেয়ে বড় হাত কারও নয়। আমরা বসতে চাই, আলাপ আলোচনা করে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে চাই। কিন্তু তাই বলে এমন না যে তারা কোনও সুযোগ নেবেন। পণ্যের দাম কৃত্রিমভাবে কেউ বাড়াতে চাইলে প্রতিরোধ করা হবে। সরকারের কাছে সেই মেকানিজম রয়েছে। মনে রাখতে হবে, সরকারের হাত অনেক বড়। সরকারের চেয়ে অন্য কারও হাত বড় নয়।
সরকারের বেঁধে দেওয়া পণ্যের দাম এবং এ বিষয়ে আইন কেউ মানেন না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা আরও অ্যাকটিভ হবো। ভোক্তা অধিকারকে বলবো, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যে দায়িত্ব সেটা যেন তাদের জানানো হয়। আমরাও আমাদের ব্যবস্থা নেবো।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কিছু দিন আগে তারা এসেছিলেন তেলের দাম আরও বাড়ানোর বিষয়ে। আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি, নট পসিবল। সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমাদের প্রশ্ন করেই শেষ করবেন না, আপনারা বাজারেও ঢুকে পড়েন। আপনারা ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমাদের রাষ্ট্রপতি একবার বলেছিলেন, সিন্ডিকেট-সিন্ডিকেট। কবে জনগণের সিন্ডিকেট হবে এর বিরুদ্ধে? সেজন্য আপনারা মানুষকে একটু এগিয়ে নিয়ে যান। তিনি বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে কাজ করছি।
মন্ত্রী বলেন, কোনও অসাধু ব্যক্তিকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। এজন্য যতদূর যাওয়া দরকার, যত শক্ত হওয়া দরকার, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোক্তা অধিকার এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে, প্রতিযোগিতা কমিশন কাজ শুরু করেছে। আমাদের ডিজিএফআই, এনএসআই, তারপর পুলিশের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে যারা রয়েছেন এবং বাজার মনিটরিংয়ে যারা রয়েছেন, সবার সঙ্গে এ কথাই বলা হয়েছে, তারা সবাই জানেন কী দাম হওয়া উচিত। এখানে কোনও কালো হাত যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে।
টিপু মুনশি বলেন, আমরা শুনেছি, জেনেছি যে কোথাও কোথাও (দাম বাড়ানোর) চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটাকে প্রথম থেকেই প্রতিহত করতে হবে। এক মাস পরেই রমজান শুরু হতে যাচ্ছে। তখন মানুষের প্রয়োজন বাড়বে। সংযমের মাস, সেজন্য সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ কম্পিটিশন কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড টেরিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আফজাল হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন, টিসিবি’র চেয়ারম্যান ব্রি. জে. মো. আরিফুল হাসান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ নেওয়াজ তালুকদার, এসবি’র ডিআইজি এ.জেড.এম. নাফিউল ইসলাম, ক্যাব প্রকাশিত ভোক্তা কণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, শিল্প মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই, এনএসআই, বিজিবি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন ।
আরবিসি/০২ মার্চ/ রোজি