স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল চত্ত্বর পেয়েছে এখন অন্য রূপ। এক সময় হাসপাতালটির ভেতর বাহিরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ময়লা, আবর্জনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করলেও এখন ফুল ফুটেছে সেখানে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশেও ফিরেছে রামেক হাসপাতাল চত্ত্বর। আগের তুলনায় চিকিৎসা সেবার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে উত্তরের সর্ব বৃহৎ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
রামেক হাসপাতাল এখন ময়লা আবর্জনায় দুুর্গন্ধ নেই। সেখানে সুবাস ছড়াচ্ছে বাহারীসক ফুল। মঙ্গলবার সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এমনই চিত্রের দেখা মেলে। রামেক হাসপাতালে প্রবেশের জন্য একটি দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে, বের হওয়ার জন্য আরেকটি। একইসঙ্গে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে হেঁটে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা। আবার প্রবেশদ্বারের পাশে যুগ যুগ ধরে জঙ্গল ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ হয়ে পড়ে থাকা বিস্তৃর্ণ এলাকা পরিষ্কার করে লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ।
রামেকে প্রবেশের শুরুতেই করা হয়েছে একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ। অন্যদিকে পূর্বপাশে ছাউনি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইক ও মাইক্রোবাস রাখার জায়গা। দেখা গেছে বাঁশি ও লাঠি নিয়ে রামেকের ভেতরে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ন্ত্রনেরও দৃশ্য। এতে রামেকে জটলা ধরে অটোরিকশা কিংবা সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকছে না। ফলে নির্বিঘ্নে একের পর এক এ্যাম্বুলেন্সে রোগী আসা যাওয়া করছে মুহূর্তের মধ্যেই।
রামেক কর্তৃপক্ষের দাবি, আগে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা আমরাই করতে পারিনি। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা না পেয়ে বাইরে ফেলতেন। তবে পরিবেশ আরও সুন্দর পরিচ্ছন্ন করার জন্য ডাস্টবিনসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়।
রোগী ও স্বজনরাও এখন হাসপাতালে এসে এখানকার পরিবেশে স্বস্তি পাচ্ছেন। হাসপাতালের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসেবার মান সম্পর্কে রোগীর স্বজনরা বলেন, আগের চাইতে পরিবেশটা অনেক সুন্দর হয়েছে। আবার ডাক্তাররাও সময় দিয়ে রোগী দেখছেন। চুরি-চামারি আটকাতে আইডি কার্ড ছাড়া ঢুকতে ও বের হতে দেয় না। এটা অনেক ভালো হয়েছে।
রামেক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ হাসপাতালে রয়েছে মোট ১২০০ শয্যা। প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার রোগীর আনাগোনা রামেকে। তবে এ পরিমাণটি গরমের সময় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় তিন থেকে চার হাজারে। ওয়ার্ড রয়েছে ৫৭টি। হাসপাতালটিতে চিকিৎসক পদ রয়েছে ২৩৩টি যার মধ্যে ৩০টি পদ শূন্য। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর মোট ৯১১ পদের মধ্যে ১৪৬টি শূন্য আছে। আগের ৫৫০ শয্যার জনবল দিয়েই ১২০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটির কার্যক্রম চলছে। এতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রামেক হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। তিনি ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর রামেকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। রামেকে আসার পর প্রথমেই নজর দেন নোংরা পরিবেশ দূর করার দিকে।
তিনি বলেন, এসেই দেখি রামেকের বিভিন্ন জায়গায় অনেক নোংরা ও দুর্গন্ধ। যেটা আমরা অল্প চেষ্টা করলেই দূর করতে পারি। ড্রেনগুলো খারাপ ছিল, জনবল ছিল কম। প্রথমদিকে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলাম। তারপর পারসোনালি এখানকার ইমপ্লোয়ারদের মটিভেট করে চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিয়ে আসি।
তিনি জানান, এখানে কোনো বাগান বা মালির খাত নেই। তারপরও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তার ইন-এক্সিট, যানজট ও সিন্ডিকেট দূরীকরণসহ ডানে-বামে ম্যানেজ করে বাগান করেছি। যাতে মানুষ রামেকে ঢুকতেই তার মনটা পরিবর্তন হয়ে য়ায়। গেটের ভেতরে বাইরে সেবা ও সচেতনতার জন্য সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। রোগীর তুলনায় জনবল কম। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যের ডিজির মাধ্যমে ১০৬ জন লোক আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নেওয়ার আহ্বান করেছি।
তিনি বলেন, রামেক হাসপাতালে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শয্যা সমস্যা। হাসপাতালে ১০ তলার ফাউন্ডেশন হলেও ৪ তলা পর্যন্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি রোগীর শয্যা বাড়ানো যেত তাহলে রোগীর সেবার মান আরও বাড়ানো সম্ভব ছিল। কারণ সবাই ফোন করে একটা বেড চাই।
রামেক পরিচালক শামীম ইয়াজদানীর আশা প্রকাশ করে বলেন, রোগীদের হয়রানি দূর করা, দ্রুত সেবাদান। তাদের সম্মান দেওয়া ও সেবার মান উন্নয়ন করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে চিকিৎসকেরাও অনেকটায় উদ্যোমী হয়েছেন, সেবা অনেক ভালো দিচ্ছেন। কিন্তু করোনার কারণে অনেকটায় ভাটা পড়ছে। মানুষ যখন রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালের নাম শুনবে তখন যেনো সম্মানের সঙ্গে নামটা উচ্চারণ করে। তিনি বলেন, দেশে ‘ওয়ান অব দ্যা বেস্ট’ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হবে রাজশাহী।
আরবিসি/০১ মার্চ/ রোজি