• শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২১ পূর্বাহ্ন

ক্যাম্প থেকে পালাচ্ছেন রোহিঙ্গারা

Reporter Name / ৮৯ Time View
Update : শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ কিছুতেই থামছে না। চট্টগ্রাম-টেকনাফ সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচল করছেন বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকরা। তারা মানছেন না ক্যাম্পের নিয়মকানুন। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার থেকে গাড়িতে করে উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের ১৫ নম্বর ক্যাম্পে যেতে পড়ে কুতুপালং বাজার। হাতের ডানেই দেখা মেলে ১, ১১, ১৪ ও ১৬ নম্বর ক্যাম্প। তখন সকাল ১০টা। ১১ নম্বর ক্যাম্পের খোলা গেট দিয়ে দল বেঁধে বেরিয়ে আসছেন ১০-১৫ রোহিঙ্গা যুবক। চট্টগ্রাম-টেকনাফ মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইউএনএইচসিআরের একটি ট্রাক থেকে একে একে তারা নিয়ে যাচ্ছেন গ্যাস সিলিন্ডার। কেউ আবার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় যাচ্ছেন কুতুপালং বাজারের দিকে। কেউ মহাসড়কে অলস সময় কাটাতে হাঁটাহাঁটি করে বেড়াচ্ছেন।

এমন চিত্রে স্থানীয় আর রোহিঙ্গা পৃথক করা কঠিন। শুধু কথা বললে মুখের ভাষাতেই রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা যায় বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয় চট্টগ্রামবাসী ছাড়া কারও পক্ষে তাদের চিহ্নিত করা দুঃসাধ্য। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের তদারকিও অনেকটা ঢিলেঢালা। এরপর ১৫ নম্বর ক্যাম্পে গিয়ে মোহাম্মদ শাহ নামে এক কিশোরের সঙ্গে কথা হয়। সে ভাঙা ভাঙা বাংলায় এ প্রতিবেদককে জানায়, পড়াশোনা আর বিশ্রামের পর এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করে। মাঝেমধ্যে ক্যাম্পের বাইরেও ঘুরে আসে।

জানা গেছে, দিন দিন কমে যাচ্ছে তদারকি। সুযোগ বুঝে ক্যাম্প থেকে দলবেঁধে পালাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। আবার মাঝেমধ্যে ধরাও পড়ছেন। ক্যাম্পের কোনো কোনো স্থানে নেই কাঁটাতারের বেড়া, কোনো ক্যাম্পে নেই উঁচু দেয়াল। এ দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে আসেন রোহিঙ্গারা। দিনের বেলায় চেকপোস্টে প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ৫০ জন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ধরা পড়েন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, কক্সবাজার শহর থেকে উখিয়া, টেকনাফ যাওয়ার পথে অনেক চেকপোস্ট আছে।

ফেরার পথেও অনেক চেকপোস্টের মুখোমুখি হতে হয়। এসব চেকপোস্টে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে রোহিঙ্গারা ধরা পড়েন। পরে তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। এভাবে কখনো ৩০, কখনো ৫০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে ট্রানজিট ক্যাম্পে জমা দেওয়া হয়। আবার অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। যেহেতু ক্যাম্পগুলো পুরোপুরি কাঁটাতার কিংবা উঁচু দেয়ালে ঘিরে রাখা যায়নি। রাতে ক্যাম্পগুলো পুরোপুরি সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হয়নি। ক্যাম্পে কয়েক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা হয়। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ওইসব রোহিঙ্গার কথোপকথনে অনুবাদকের ভূমিকায় ছিলেন হোসেন নামে একজন।

ওই রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, ক্যাম্পে থাকা-খাওয়ার সুযোগ-সুবিধা অনেক। কিন্তু নগদ টাকা হাতে পাওয়ার সুযোগ তেমন নেই। যারা দরিদ্র তারা সাধারণত ক্যাম্প থেকে বের হন না। যাদের আগে থেকে টাকা-পয়সা ছিল, তুলনামূলক ধনী রোহিঙ্গা কিংবা কারও স্বজন মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকায় থাকেন শুধু তারাই ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আবার কেউ অন্য কোনো জেলায় গিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরুর চেষ্টা চালান। যারা এভাবে সফল হয়েছেন তাদের ছত্রচ্ছায়ায় আবার তাদের স্বজনরাও তাদের কাছে চলে যান। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে আরও জানা যায়, আল-ইয়াকিন গ্রুপের সদস্যদের চাঁদাবাজি, অপহরণ ঘটছে অহরহ।

স্থানীয়ভাবে চলাচল করা সিএনজির ৭০ শতাংশ যাত্রীই রোহিঙ্গা। তারা টেকনাফ, উখিয়া থেকে ওঠেন। কক্সবাজারেও যান। ক্যাম্পগুলোয় মারামারি, অপহরণ নিত্যদিনের ঘটনা। কখনো সালমান শাহ গ্রুপ, কখনো আল-ইয়াকিনের সদস্যরা নির্যাতন করেন। এরাই রোহিঙ্গা শিশুদের ব্যবহার করে নানা অপকর্মে। এক সিএনজিচালক জানান, এক সন্ধ্যায় উখিয়ার বালুখালী থেকে চার রোহিঙ্গা ওঠেন তার সিএনজিতে। কুতুপালং আসার পর চেকপোস্টে আটকায়। কার্ড দেখান। কিন্তু বাবার নাম জানতে চাইলে বলতে পারেন না। আটকে দেন এপিবিএন সদস্যরা। পরে স্বীকার করেন তারা রোহিঙ্গা, গন্তব্য কক্সবাজার। একে একে চারজনকে তল্লাশি করা হয়। সবশেষ যে নারী ছিলেন তার কাছে মেলে ১০ হাজার পিস ইয়াবা। মনির নামে উখিয়ার এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণে স্থানীয়রাই এখন বিপাকে। ওরা যখন প্রথম আসে, মানবেতর জীবনযাপন শুরু করে তখন তারাই এগিয়ে আসেন, সাহায্য-সহযোগিতা করেন। পথে-ঘাটে, দোকানে-বাজারে, গাড়িতে সর্বত্রই তাদের দেখা মেলে। অথচ তাদের (রোহিঙ্গা) ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

আরিবিসি/২৬ ফেব্রুয়ারী/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category