আরবিসি ডেস্ক : ব্যবসায়িক অংশীদার শহিদুলকে ব্ল্যাকমেলিংয়ের জন্য ২ হাজার টাকা দিয়ে ববিতা নামে এক নারীকে ভাড়া করেন আলমগীর। পরিকল্পনামাফিক ওই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করান শহিদুলের। একপর্যায়ে মুক্তিপণের আশায় ববিতাকে দিয়ে শহিদুলকে নিরিবিলি জায়গায় ডেকে নেন। হাঁকান মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। সঙ্গে চলে নৃশংস নির্যাতন। জ্ঞান হারিয়ে ফেললে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শহিদুলকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকান্ডে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী মো. আলমগীরসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত র্যাব-১ টাঙ্গাইল, শেরপুর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। র্যাব-১ অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন এসব কথা জানান।
গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, শহিদুল দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া বাইপাইল বুড়িরবাজার এলাকায় যৌথভাবে কর্ণফুলি শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড পরিচালনা করছিলেন। মূল পরিকল্পনাকারী আলমগীর ভিকটিম শহিদুলের সমিতির পার্টনার। তিনি ভিকটিমকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করবেন বলে অর্থের বিনিময়ে পূর্বপরিচিত ববিতাকে রাজি করান। পরে ববিতা অত্যন্ত সুকৌশলে শহিদুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি ববিতার দেওয়া ঠিকানায় শহিদুলকে ডেকে নিয়ে আসা হয়।
আসামিদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে লে. কর্নেল মোমিন বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনাস্থল আশুলিয়ার পলাশবাড়ী তালতলা মাঠে পৌঁছামাত্র সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া আফজাল, সাগর হোসেন বাবু, মাসুদ, রাকিব, রফিকুল ইসলামসহ পলাতক আসামি মিলন, পিন্টু ও ধলা বাবু ভিকটিমকে হাত, পা ও চোখ বেঁধে ফেলেন। পরে তারা মুক্তিপণের জন্য শহিদুলকে হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। শহিদুলের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন থেকে আসামি আফজাল তার ব্যবসায়িক পার্টনার আসামি মাসুদকে জানান, শহিদুল অসুস্থ হয়ে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় পড়ে আছেন। মাসুদ ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে পলাশবাড়ীর হাবিব হাসপাতালে, পরে মুজারমিল র্যাব-১ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে ভিকটিমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরদিন আনুমানিক রাত ২টায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে শহিদুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই আবুল মনসুর বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে লে. কর্নেল আবদুল মোমেন বলেন, ববিতাকে আলমগীর মাত্র ২ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া করেন। তাদের ব্যবসায়িক কোনো বিরোধ ছিল না। মূলত অল্প সময়ে অধিক টাকা আয়ের জন্যই আসামিরা ঘটনাটি ঘটান। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মো. আলমগীর, ববিতা খাতুন ওরফে আকলিমা, সাগর হোসেন বাবু ওরফে কালা বাবু, মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ, আফজাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম ওরফে সাগর ও রাকিব শেখ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা শহিদুল ইসলামকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
আরবিসি/২১ ফেব্রুয়ারী/ রোজি