স্টাফ রিপোর্টার : ফায়ারফাইটিং সরঞ্জাম কেনার জন্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সঠিক প্রতিষ্ঠান না হলেও সে বিষয়ে একটি ভুয়া চুক্তি দেখিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে কোরিয়ার একটি কোম্পানি।
চুক্তি অনুযায়ী আটটি ফায়ারফাইটিং ট্রাক না নেওয়ায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোম্পানিটি ১০ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৭ কোটি টাকা) দাবি করেছে।
এ ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রীয় এই সেবা প্রতিষ্ঠান।
ওই চুক্তিতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের ই-মেইল, পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন নম্বর ও এনআইডিকার্ডসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জাল করা হয়েছে।
এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এছাড়া সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামালাসহ অভিনব জালিয়াতি মোকাবিলায় অভিযুক্ত কোরিয়ান কোম্পানিকে শাস্তির আওতায় আনার যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগর ভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে কোরিয়ান কোম্পানির সাইবার প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। মেয়র বলেন, সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী ফায়ার ফাইটিং সরঞ্জাম কেনার কোনো এখতিয়ার নেই সিটি করপোরেশনের। কিন্তু কোরিয়ান ওই কোম্পানি রাসিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছে।
রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আন্তর্জাতিক একটি চক্র জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপতৎপরায় লিপ্ত। চক্রটি কৌশলে আমার পাসপোর্ট, ভুয়া ইমেইল আইডি ও মোবাইল নম্বর এবং কর্পোরেশনের কর্মকর্তার ভুয়া নাম, পদবী ও স্বাক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে কোরিয়ান SHINSHIN Global Co. Ltd কাছ থেকে ৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক কিনতে ৯টি ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেছে বলে জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, কোরিয়ান ওই কোম্পানি তৃতীয় কোনো পক্ষ দ্বারা প্রতারিত হয়েছে, নাকি কোম্পানির লোকজনই এ কাজ করেছে, তা যথাযথ তদন্ত ও তথ্য প্রমাণ প্রাপ্তি সাপেক্ষে জানা যাবে। তবে তারা আমার সঙ্গে ফোনে কখনও কথা বলেনি বা আমার ইমেইলে যোগাযোগও করেনি। বিষয়টি ভুয়া জানানোর পরও তারা সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসে একাধিকবার অভিযোগ দাখিল করেছে। এতে আমার ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার গভীর অপচেষ্টা।
মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কার্যাবলীর মধ্যে ফায়ার ফাইটিং সেবা অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম কেনার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া টেন্ডার ছাড়া কোনো পণ্য কেনার সুযোগও নেই।
তিনি জানান, ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি কোরিয়ার ওই শিনশিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি রাজশাহীতে ১০০ মেগাওয়াট সোলার প্ল্যান্ট নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর চিঠি দেয়। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময়ে ওই কোম্পানির প্রেসিডেন্ট বিসি শিন রাজশাহীতে আসেন। একাধিক আলোচনার পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন তাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এর প্রায় তিন বছর পর ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর বিসি শিন সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাডভাইজার আশরাফুল হককে ফোন করে আটটি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক কেনার বিষয়ে জানতে চান এবং ভুয়া কাগজপত্র পাঠান। যাচাই করে দেখা যায়, তার পাঠানো সব কাগজ ভুয়া।
মেয়র বলেন, ২০২১ সালের ০৪ ডিসেম্বর বিসি শিন আমার বরাবর কথিত যে ডিমান্ড নোট পাঠান, তাতে সংযুক্ত সব কাগজ ভুয়া প্রমাণিত হয়।
তিনি জানান, ওই ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় গত ২৩ ডিসেম্বর জিডি করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চক্রটির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। কোরিয়ান ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের শিগগিরই মামলা করা হবে।