রাবি প্রতিনিধি : ভ্রমণ অচেনাকে চেনা এবং অজানাকে জানার নতুন এক অভিজ্ঞতা। শুধু অজানাকে জানতেই মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে ভ্রমণ করেই চলেছেন। সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট থেকে শুরু করে সমুদ্রের তলদেশে কিংবা চাঁদের দেশে পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন মানুষ। তবুও মানুষের ভ্রমণ পিপাশা যেন মিটছে না। তারা প্রতিনিয়ত ভ্রমণ করেই চলেছেন। কেউ করছেন দেশভ্রমণ আবার কেউ করছেন বিশ্বভ্রমণ। আর সেই ভ্রমণটি যদি হয় ছাত্রাবস্থায়! তাও আবার বাসা থেকে অতিরিক্ত টাকা না নিয়ে শুধুমাত্র মাসের টাকা থেকে কিছু অংশ জমিয়ে! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! সম্প্রতি বাসা থেকে পাঠানো টাকা থেকে কিছু অংশ জমিয়ে পুরো দেশভ্রমণ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। এবার স্বপ্ন দেখছেন বিশ্বভ্রমণের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আয়াতুল্লাহ। স্থানীয় যানবাহন ব্যবহার করে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর দিনাজপুর জেলা দিয়ে শুরু করে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি নেত্রকোনা জেলা ভ্রমণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা ভ্রমণ শেষ করেছেন এই শিক্ষার্থী।
ভ্রমণের শুরুর গল্পে আয়াতুল্লাহ জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত অত্যন্ত ঘরকুনো ছিলেন এই শিক্ষার্থী। এতদিনে নিজ জেলা বরিশাল ব্যতীত অন্যকোথাও ভ্রমণ করেননি তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করার সুবাধে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে সর্বপ্রথম ঢাকায় আসেন তিনি। পরবর্তীতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া হয় তার। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রথম বর্ষের শেষের দিকে সর্বপ্রথম ভ্রমণের উদ্দেশ্যে দিনাজপুরে যায় তিনি। মূলত দিনাজপুর ভ্রমণের নানা সুখকর এবং কষ্টময় স্মৃতিই তাকে ভ্রমণের দিকে আকৃষ্ট করে তোলে। এরপরই পুরো দেশভ্রমণের মিশনে নামেন রাবির এই শিক্ষার্থী।
ভ্রমণের নানা অভিজ্ঞতার গল্প শোনায় আয়াতুল্লাহ। তিনি জানায়, বাসায় বাবা-মা, বড় এবং ছোটভাই আজ অবধি জানেন না যে তিনি পুরো দেশ ভ্রমণ করে ফেলেছেন। জানবেই বা কি করে! ভ্রমণের জন্য তো সে কোনোদিনও বাসা থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়নি।
কম খরচে কিভাবে পুরো দেশভ্রমণ করা হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ভ্রমণে বের হলে যে জায়গায় যেতাম সে জায়গার বন্ধুদের সহযোগিতা পেতাম। তাদেরই বাসায় থাকতাম। অনেক সময় দোকানে বসে চায়ের আড্ডায়, কখনও লঞ্চ ঘাটে আবার কখনও মসজিদে, রেল স্টেশনে কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলের উপজাতিদের সঙ্গে ঘুমিয়েও রাত কাটিয়েছি। ভ্রমণের পাশাপাশি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাসহ দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষদের মাঝে সন্তান শিক্ষার গুরুত্ব, মাদকের ভয়াবহতা, ভ্রমণের গুরুত্ব, শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করেছেন বলে জানান তিনি।
আয়াতুল্লাহ জানায়, সম্প্রতি টেকনাফ টু তেতুলিয়া সাইকেল চালিয়ে ভ্রমণের উদ্যোগও নিয়েছিলেন তিনি। এই ভ্রমণে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করার প্রবল ইচ্ছাও ছিল তার। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে এই ভ্রমণ শুরু করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। তবে কোনো সহযোগিতা পেলে অবশ্যই ভ্রমণটি সমাপ্ত করবেন বলে জানান তিনি। আর পড়াশোনা শেষ করেই তিনি পা বাড়াবেন বিশ্বভ্রমণের স্বপ্নপূরণে।
আরবিসি/০৯ ফেব্রুয়ারি/ রোজি