স্টাফ রিপোর্টার : আশপাশ থেকে কুড়িয়ে আনা ইট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে হিমেলের মারা যাওয়ার স্থান। একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের আগুনে পুড়ে ছারখার ঘাটক ট্রাক। মাঝখানের জায়গায় হিমেলের হাতের অন্তত ২০টি শিল্পকর্ম সাজিয়ে করা হয়েছে হিমেল কর্নার। সামনেই বালি আর ইটের খোয়া দিয়ে মস্তিষ্ক পিষে যাওয়া হিমেলের মৃতদেহের প্রতিকৃতি গড়া হয়েছে। এর মাঝে বেজে চলেছে করুণ সুর। বিমর্ষ এক তরুণ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দেখছে ঘাতক ট্রাক যেখানে নির্মমভাবে জীবন দিয়েছে হিমেল।
এভাবেই ক্যাম্পাসের ভেতর ট্রাকচাপায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মাহবুব হাবিব হিমেলের স্মরণে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী করেছে চারুকলার শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন শহীদ মাহবুব হাবিব হিমেল একাডেমিক ভবনের সামনে মঙ্গলবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে দিনব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) হিমেল স্মরণে উন্মুক্ত আর্টক্যাম্প আয়োজন করেছিল চারুকলার সতীর্থরা। সে ক্যাম্প থেকে সৃষ্ট ২ শতাধিক শিল্পকর্মের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হিমেলের করা অন্তত ২০টি শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়েছে।
আয়োজক শিক্ষার্থীরা বলছেন, হিমেল স্মরণে আর্ট ক্যাম্পের আজ শেষ দিন। তারা তাদের মনের ভাবকে চিত্রকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। হিমেলকে হারিয়ে সবাই শোকার্ত।
গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুন্নাহার তিশা বলেন, সব কথা তো আর মুখে বলে প্রকাশ করা যায় না। হিমেলের মৃত্যু প্রত্যক্ষভাবে দুর্ঘটনা হলেও পরোক্ষভাবে এটি হত্যাকাণ্ড। ঘটনাটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার চিত্র নয়, পুরো বাংলাদেশের চিত্রকে দেখিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গাতেও আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশে নিরাপত্তা মৌলিক অধিকার হলেও প্রতিনিয়ত এটির অভাব বোধ করছি।
চিত্রকর্ম প্রদর্শনী সম্পর্কে হিমেলের সহপাঠী আতিক ইমরান বলেন, হিমেলের বন্ধু, ছোট ও বড় ভাইদের যৌথ উদ্যোগে এই প্রতিবাদী চিত্রকর্ম প্রদর্শনী করা হয়েছে। আমাদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিতভাবে প্রতিবাদ চলমান থাকবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (০১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে নির্মাণাধীন বিজ্ঞান ভবনের সামনে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল নিহত হয়। হিমেল চারুকলা অনুষদের গ্রাফিকস ডিজাইন, ক্রাফট ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনার পর পরই আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সে সময় কয়েক দফা দাবির মধ্যে মাহমুদ হাবিব হিমেলের নামে বিজ্ঞান ভবনের নামকরণের দাবি জানিয়েছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আরবিসি/০৮ ফেব্রুয়ারি/ রোজি