আরবিসি ডেস্ক: মাঘের শীতের তীব্রতার মধ্যে উত্তরের জনপদজুড়ে বৃষ্টির হানায় ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। শুক্রবার ভোর থেকে বৃষ্টির কারণে শ্রমজীবী মানুষ কর্মস্থলে যেতে পারেনি; ছুটির দিনের কারণে রাস্তাঘাটও ছিল প্রায় ফাঁকা।
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, জেলায় ভোররাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই বেড়েছে। বগুড়া আবহাওয়া কার্যালয়ের ওয়্যারলেস অপারেটর রবিউল ইসলাম শুক্রবার সকালে বলেন, রাত সোয়া ৩টা থেকে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
শীতের মৌসুমে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত উল্লেখ করেন রবিউল বলেন, “বৃষ্টির কারণে শীতের তীব্রতা কিছুটা বেড়েছে। সকাল ৯টায় বগুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির প্রভাবে দুপুর ১২টার দিকে তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।” গতকাল সারাদিন এ বৃষ্টিপাত চলবে। তবে আগামীকাল শনিবার বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাবে বলে জানান রবিউল।
এদিকে বগুড়া শহরে বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় পানি জমে যেতে দেখা গেছে। শীত, বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। শহরের রাস্তাগুলো ছিল প্রায় ফাঁকা। ইরি-বোরো রোপণের ভরা মৌসুম হলেও মাঠে দেখা যায়নি কৃষকদের। কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর ঠাণ্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন।
শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সড়ক ও মাঠে-ময়দানে পানি জমে গেছে। থেমে থেমে মেঘের গর্জন যেন বর্ষার আমেজ সৃষ্টি করেছে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর এদিন কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষ কম চলাচল করছে। কাজে বের হতে না পেয়ে বিপাকে পড়েন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের লোকজন। কুড়িগ্রামের বেলগাছা ইউনিয়নের নির্মাণ শ্রমিক ঠিকাদার আকলাস হোসেন বলন, “বৃষ্টির কারণে শ্রমিকরা কাজে আসতে না পারে নাই। এখন আমার পাঁচটি বিল্ডিংয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে।
রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের কৃষক হাসেম আলী বলেন, “এখন বোরো রোপনের ভরা মৌসুম। এতদিন শীত উপেক্ষা করে কাজে বের হয়েছিলাম। আজ বৃষ্টির কারণে যেতে পারেনি।” চর কুড়িগ্রাম বস্তির আবেদ আলী ও মনছার জানান, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় মিশুক-রিকশা নেইা ফলে চলাচললে ভোগান্তি হচ্ছে। এদিকে বৃষ্টির কারণে আলু ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণের শঙ্কা দেখা গিয়েছে সদর উপজেলার শিবরাম গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান।
তিনি বলেন, “গত কয়েকদিনের টানা শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলু ক্ষেতে মড়ক দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে মড়ক আর বাড়ে কিনা তাই নিয়ে চিন্তা করছি।” কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শামসুদ্দিন মিয়া জানালেন, বৃষ্টি ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় আলুতে ‘লেট ব্লাইট’ ভাইরাস আক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
এ পরিস্থিতিতে আলু চাষিদের বৈরী আবহাওয়া সম্পর্কে সজাগ থাকতে এবং ওষুধ ছিটিয়ে ছত্রাকের আক্রমণ ঠেকানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান। দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা কমলেও হঠাৎ করেই ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টিতে জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় ৩০ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।” এটি শীত মৌসুমে দিনাজপুরে চার ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড বলেও জানান তোফাজ্জল। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া কর্মকর্তা আরও বলেন, বৃষ্টি হলেও একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ফলে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমেছে।
“শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।” স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে মেঘের গর্জনের সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় মানুষজন তেমন ঘর থেকে হয়নি। সকাল ৯টা পর্যন্ত শহরের রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য ছিল।
আরবিসি/০৪ ফেব্রুয়ারি/ রোজি