• শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন

মেজর সিনহা হত্যার রায় নিয়ে মানুষের কৌতূহল

Reporter Name / ৮৮ Time View
Update : সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬)। সেই আলোচিত হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন সোমবার (৩১ জানুয়ারি)।

কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করবেন। এ রায়কে কেন্দ্র করে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। সকাল থেকে আদালত এলাকায় মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। সবখানেই চলছে আলোচনা। টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ আসামির কী ধরনের শাস্তি হচ্ছে- সেটা শোনার অপেক্ষায় সবাই। আদালতে এসেছেন আসামিদের স্বজনরাও।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সাইদুল বাংলানিউজকে বলেন, কোর্ট এলাকায় এত মানুষ কোনও সময় দেখা যায়নি। রায় শোনার জন্য অনেক মানুষ এখানে ভিড় করছে।

হত্যা মামলার আসামি জসীম উদ্দীন কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানা থেকে আদালতে হাজিরা দিতে এসেছেন। সকাল সাড়ে ১১টায় হাজিরা দিতে না পেরে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকাল সকাল কোর্টে আসলাম, কিন্তু হাজিরা দিতে পারলাম না। কোর্ট এলাকায় প্রচুর মানুষ। মনে হচ্ছে আজকে কোর্ট বসবে না’।

মামলার বাদী ও নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, সিনহাকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই আসামি প্রদীপ-লিয়াকতের সর্বোচ্চ সাজা চাই। অন্য আসামিদের সাজা হোক যার যার অপরাধের ভিত্তিতে। অভিযুক্ত আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত হলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে। এ রায়ের মাধ্যমে দেশের মানুষ জানবে, অপরাধী যে-ই হোক না কেন, অপরাধ করলে শাস্তি ভোগ করতেই হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, আমরা এ মামলার সকল অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। প্রদীপ-লিয়াকতসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি দিবেন বলে আমরা আশাবাদী। আসামিদের আদালতে আনা হবে দুপুরের পর। করোনা মহামারির মধ্যেও স্বল্প সময়ে সিনহা হত্যার রায় দেশে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

এর আগে গত ১২ জানুয়ারি মামলার যুক্তি-তর্ক শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি দিনটি ধার্য করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

মামলায় আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

সাবেক ওসি প্রদীপের আইনজীবী সমীর দাস গুপ্ত বলেন, ‘প্রদীপ খুনের নির্দেশ দিয়েছেন কিংবা পরিকল্পনা করেছেন, তার প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। তাই আশা করছি, আদালত প্রদীপকে বেকসুর খালাস দেবেন’।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।

সিনহা হত্যার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। তিনটি মামলার দুটি মাদক রাখার অভিযোগে এবং একটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে।

এ ঘটনায় হত্যা মামলাটি করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। ওই বছরের ৫ আগস্ট আদালতে করা ওই মামলায় তিনি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ পুলিশের নয় সদস্যকে আসামি করেন। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে আসামি করে কক্সবাজার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় র‌্যাব। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন । তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

গত বছরের ২৭ জুন প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়।

আরবিসি/৩১ জানুয়ারি/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category