• সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে যত্রতত্র ইটভাটায় নস্ট হচ্ছে ফসলি জমি

Reporter Name / ১৩১ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর গ্রাম পর্যায়ে ফসলের জমি নস্ট করে গড়ে উঠছে একের পর এক ইটেরভাটা। ফল ও ফসলে সবুজ প্রকৃতির মধ্যে এবং লোকালয়েও গড়ে উঠেছে পরিবেশ বিধ্বংসী ইটেরভাটা। এসব ইটেরভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।

রাজশাহীর পাবা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে একের পর এক ইটেরভাটা গড়ে উছেছে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষ করে। শুধু রাজশাহীর পবা উপজেলাতেই নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও একই কায়দায় ফসলি জমিতেই গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটেরভাটা। প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলছে এসব ইটভাটিা।

এই ইটেরভাটা অধিকাংশেরই যেমন পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। তেমনি এগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও তেমন নজির নেই। অনুমতিবিহীন এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় তাই নস্ট হচ্ঠেছ আশেপাশের কৃষিক্ষেত্র। ফসলি জমিতে ইটভাটি গড়ে ওঠায় পরিবেশ দূষণসহ ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে। ক্রমেই তামাটে বর্ণ ধারণ করছে ফসলি জমির মাটি। এছাড়া উর্বর জমির ওপরের স্তর (টপ সয়েল) চলে যাচ্ছে ইটভাটিতে। এতে জমির উর্বরা শক্তি আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। আর বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফল ও ফসলে। এসব ইটভাটির বেশীর ভাগেই কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়কারী এসব ইটেরভাটা থেকে বিষাক্ত কলো ধোঁয়ার সঙ্গে সুক্ষ কণার নির্গত ছাই আশপাশের গাছপালা ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করছে। সাধারণত ছাই ও বস্তুকণা গাছের পত্ররন্ধ্র বন্ধ করে দেয়। এতে উদ্ভিদের স্বাভাবিক সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বষণ প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। কার্বন-ডাই অক্সাইড ও সালফার-ডাই অক্সাইড মিশ্রিত ছাই আম, লিচু, কাঁঠাল, ধান, শিম, কুমড়া, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের রেণুকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এতে ফসলের উৎপাদনও মারাত্মকভাবে কমে যায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, দুই বা তিন ফসলী জমিতে বা এর পাশে ইটভাটা করা যাবে না। আর এক ফসলি জমিতে ইটভাটা করতে হলেও সেই চৌহদ্দির প্রতিবেদন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কাছে জমা দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালীরা তা করেন না।

এদিকে, রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী রাজশাহী জেলায় বর্তমানে ইটভাটি রয়েছে ১৩৬টি। এসবের মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় ২১টি, পবা উপজেলায় ৪৬টি, পুঠিয়া উপজেলায় ১৪টি, চারঘাট উপজেলায় সাতটি, বাঘা উপজেলায় দুটি, মোহনপুর উপজেলায় ছয়টি, দুর্গাপুর উপজেলায় ১০টি, তানোর উপজেলায় দুটি ও বাগমারা উপজেলায় ২৮টি। এই ১৩৬টির মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৩৯টির। এছাড়া রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ইট পোড়ানোর লাইসেন্স নিয়েছে মাত্র ১০টি ইটভাটা। বাকিগুলোর লাইসেন্সই নেই।

অথচ পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র এবং জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে লাইসেন্স ছাড়া কোনোভাবেই ইটভাটি নির্মাণ করা যাবে না বলে নীতিমালা রয়েছে। দ্ইু বা তিন ফসলি জমিতে ইটভাটি নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না মালিকরা। রাজশাহীতে আইন লঙ্ঘন করেই বেশিরভাগ ইটভাটি গড়ে উঠেছে।
রাজশাহী ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি সভাপতি সদরুল ইসলাম বলেন ইটভাটার লাইসেন্স পেতে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিতে হয়। এই ছাড়পত্র নেওয়ার পর জেলা প্রশাসকের দফতরে আবেদন করতে হয়। যা দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। তিনি বলেন সময়মত পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়া যায় না। পেলেও লাইসেন্স পেতে দীর্ঘ সময় লাগে।

আরবিসি/০৭ জানুয়ারি/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category