স্টাফ রিপোর্টার: মোহনপুর উপজেলায় অনুমোদন ছাড়াই মাছ চাষের জন্য ফসলি জমিতে ইচ্ছেমতো পুকুর ও ঘের তৈরি করা হচ্ছে। এতে ক্রমেই কমছে চাষের জমি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, গত বর্ষায় পানি জমে বেশ কিছু স্থানে ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসনের কাছে দেন দরবার করেও বিলের পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হয়নি। পুকুর খনন যেভাবে বাড়ছে, সামনে আরও বেশি পরিমাণ আবাদী জমি থাকবে না চাষের জন্য। মোহনপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা ভিটা জমি কেটে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পুকুর খননের বৈধতা মিলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৯ সালের ১০ মার্চ উচ্চ আদালতের ২৪৭৬ নম্বর রিট পিটিশনের আদেশে বলা হয় মোহনপুর উপজেলার আবাদী ভূমিসহ পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে পুকুর খনন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। সম্প্রতি সকল ধরণের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিন ফসলি জমিসহ ভিটা কেটে পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল ইউনিয়নের ধোপাঘাটা ভেটুপাড়া, মৌগাছি ইউনিয়নের বিদিরপুর বকপাড়া, রায়ঘাটি ইউপির হাসেন কোল্ডস্টোর হাটরা কালিতলাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি পুকুর দীঘি খননের কাজ চলছে। পুকুর ব্যবসায়ীরা তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সরকারি দলের রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনে স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজ হয়। যার কারণে তিন ফসলি জমির পাশাপাশি বাঁশঝাড় ও ভিটা জমি জমিতে পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে।
ফলে একদিকে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধের কারণে কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় বর্ষায় হাজার হাজার বিঘা জমির ফসলহানির ঘটনা ঘটছে অন্যদিকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে কতিপয় দালাল চক্র।
অভিযোগ উঠেছে, অতিরিক্ত পুকুর খননের প্রভাবে বর্ষাকালে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকারী ফসল পান বরজ ও ধান ডুবে কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। অতি বৃষ্টি হলে বসত বাড়ি নিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়েন গ্রামীণ জনজীবন। বর্ষার পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারে না বলে চাষ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে শত শত হেক্টর জমির চৈতালী ফসল। জাহানাবাদ ইউনিয়নের পুরপাড়া মৌজা এবং কেশরহাট পৌর এলাকার দীঘাডাঙ্গা মৌজার একাধিক গভীর নলকূপের ড্রেনেজ নষ্টসহ স্কীম নষ্ট করে পুকুর খনন করা হয়েছে। এভাবে দিনে দিনে ছোট হয়ে আসছে ফসলি জমি।
ভেটুপাড়া গ্রামের হোসেন আলী মৃধা নামের এক ব্যক্তির আমবাগান ও বাশ বাগান নষ্ট করে পুকুরের খনন মধ্যস্থতাকারি (দালাল) পবা উপজেলার জিয়াউল ইসলাম জিয়া ও আশরাফুল আলম বলেন, আমরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং ওসি সাহেবকে ম্যানেজ করে তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পুকুর খনন করছি। সবাই পুকুর কাটছে আমরা কাটলে দোষ কি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানওয়ার হোসেন বলেন, মোহনপুরে পুকুর খনন হচ্ছে জানা ছিল না। অবগত হলাম, ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেওয়া হবে।
আরবিসি/২৫ ডিসেম্বর/ রোজি