রাবি প্রতিনিধি : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। হাজারো শিক্ষার্থীর প্রাণের ক্যাম্পাস, হৃদয়ের স্পন্দন এবং আবেগ-অনুভূতির জায়গা। ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৭৫০ একরের এই ক্যাম্পাসের প্রথম দিনটি সত্যিই অসাধারণ। চান্স পাওয়ার পর প্রত্যেকেই স্বপ্নের ক্যাম্পাস নিয়ে মনে মনে আঁকতে থাকে নানা স্বপ্ন, নানা পরিকল্পনা। প্রস্তুতি নিতে থাকে ক্যাম্পাসের প্রথম দিন কীভাবে কাটাবে এবং কী করবে। প্রবীণরাও প্রস্তুতি নিতে থাকে কীভাবে নবীনদের বরণ করে নেওয়া যায়। প্রস্তুতি শেষে ওরিয়েন্টেশনের দিনেই সেটি প্রকাশ পায়। সবাই ভেসে যায় আনন্দের জোয়ারে।
নানা আয়োজন আর আনন্দঘন পরিবেশে গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়েছে। এই বিশেষ দিনে মতিহারের সবুজ চত্ত্বর মেতেছিল উৎসবের আমেজে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, নবীন ছাত্রছাত্রীরা সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। অনেক নবীনের সঙ্গে আবার তাদের অভিভাবকদেরও দেখা গেছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের প্রবীণরাও এসেছেন সাজগোজ করে নানা আয়োজনে নবীনদের বরণ করে নিতে। প্রবীণ ছাত্রীদের কেউ কেউ শাড়ি পরে ও ছেলেরা এসেছে পাঞ্জাবি অথবা শার্ট-কোর্ট-টাই পরে। প্রত্যেক বিভাগে পৃথক পৃথকভাবে বিভাগীয় প্রধানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে স্ব স্ব বিভাগের শিক্ষক ও নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষকরা নবীনদের রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল উপহার দেয়ার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়। এ সময় শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতিমূলক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলার জন্য নবীনদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রবীণরাও নবীনদের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং বিতরণ করে রজনীগন্ধা ও লাল গোলাপ। আনন্দের এই দিনে বাদ যায়নি মিষ্টি বিতরণ পর্বও।
নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে সবাই যখন স্ব স্ব বিভাগ থেকে বেরিয়ে আসে তখনই আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সবার হাতে হাতে ফুল, সবাই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। প্যারিস রোডে অনেকে ব্যস্ত গ্রুপ সেলফি তোলায়। অনেকে আবার বসে পড়েছে আনন্দ আড্ডায়। ক্যাম্পাসে পুরোটা দিন অতিবাহিত হয়েছে এমনই এক আনন্দঘন পরিবেশে। আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে নতুন ক্যাম্পাসে নতুন জীবনের শুরু! সত্যিই এক অন্যরকম অনুভূতি।
ক্যাম্পাসের এই প্রথমদিনে কথা হয় ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ নবীন শিক্ষার্থী বিক্রম রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে আমি সত্যিই অনেক আনন্দিত। কেননা এটি উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব। রাবিতে চান্স পাওয়ার মাধ্যমে আমার দীর্ঘদিনের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। চান্স পাওয়ার পরই প্রথম দিনের ক্লাসের জন্য অধীর আগ্রহে ছিলাম। সময়ই যেনো কাটছিলো না। অবশেষে সেই দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটেছে। প্রথম দিনের ক্যাম্পাসে বিভাগের শিক্ষক এবং বড় ভাই-আপুদের সান্নিধ্যে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জিন্নাতুন নাহার জেবা বলেন, ‘আজ ছিল আমার জীবনের বিশেষ একটি দিন। সারা রাত শুধু এটাই ভেবেছি সকালটা কেমন হবে! আজ যখন রাবির মেইন গেট দিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করছিলাম, তখন মনে হলো যেন এক উষ্ণ বাতাস আমায় ক্যাম্পাসে স্বাগতম জানালো। এ যেন এক যুদ্ধ জয়ের পরে বিজয়ের আনন্দ। এমন একটা উজ্জ্বল দিনের অপেক্ষায় কতো নির্ঘুম রাত কেটেছে! কত পরিশ্রম, কত ত্যাগ! এর সবটাই আমার বাবা-মা,পরিবারের অবিচল সাপোর্ট, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণের অবদান।’
প্রিয় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী হতে পেরে অনেক আনন্দিত চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি সত্যিই আমার জন্য অনন্য। পরিচ্ছন্ন এবং জ্যাম বিহীন নগরী হওয়ায় রাজশাহী আমার প্রিয় শহর৷ আর এজন্যই প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমার প্রাণের ক্যাম্পাস।’
এদিকে নবীনদের সার্বিক সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি সর্বদা তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, নবীনদের আগমন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল বডি তৎপর রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ক্যাম্পাসে মাইকিং করা হয়েছে। র্যাগিং বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে সব ধরনের সচেতনতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এরপরও যদি র্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটে আর যদি সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সবোর্চ্চ শাস্তি বহিস্কার করাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নবীনদের পদার্পন নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের নতুন সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি। পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেওয়ার জন্য তাতের অভিনন্দন জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের কাছে চাইব যে তারা নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে।
উপ-উপাচার্য আরও বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, গবেষণা, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তাদের অধিকার এবং কর্তব্য সম্পর্কে তাদের অবগত হতে হবে। আশা করি তারা শিক্ষার্থী হিসেবে সময়নিষ্ঠ, অধ্যবসায়ী হবে এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পদযাত্রা করবে। আমি চাইব তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করবে।
আরবিসি/২১ ডিসেম্বর/ রোজি