• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪ অপরাহ্ন

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

Reporter Name / ১৬২ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : আজ চৌদ্দই ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নিধনের মর্মন্তুদ স্মৃতিঘেরা এক দিন। বাঙালীর মেধা-মনন-মনীষা শক্তি হারানোর দিন। ইতিহাসের পাতায় কালো আখরে উৎকীর্ণ বেদনা বিধুর কালবেলা। পথে পথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল বাঙালীর কণ্ঠে আজ উচ্চারিত হবে ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে, ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই…’।

দীর্ঘদিন পরে হলেও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারহীনতার দায় থেকে বেরিয়ে এসেছে দেশ। সকল রক্তচক্ষু ও দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের পরও সাহসিকতার সঙ্গে জাতিকে দেয়া ওয়াদা রক্ষা করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে শীর্ষ প্রায় সকল ঘাতকদের বিচারের রায় ঘোষিত হয়েছে। দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায়ও কার্যকর করা হয়েছে অনেকের।

শত চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে একাত্তরের শীর্ষ ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাসিম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আমৃত্যু জেলের ঘানি টানতে টানতে কারাগারেই মারা গেছে রাজাকার শিরোমনি গোলাম আযম ও আবদুল আলীম। একাত্তরের ঘাতক আরও ১৮ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী এখন কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। বুদ্ধিজীবী পরিবারগুলোর বিচার প্রাপ্তির স্বস্তি আর সবগুলো রায় কার্যকর করে দেশকে আরেকটি কলঙ্ক থেকে পরিপূর্ণ মুক্ত করার দাবি নিয়ে বছর ঘুরে আবার এসেছে বুদ্ধিজীবী দিবস।

১৯৭১ সালের নয় মাস রক্তগঙ্গা পেরিয়ে গোটা জাতি যখন উদয়ের পথে দাঁড়িয়ে, পূর্ব দিগন্তে টগবগিয়ে বিজয়ের লাল সূর্য উদিত হচ্ছে, দেশ যখন স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে- ঠিক তখনই বাঙালীর কৃতী সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যা করে পরাজয়ের গ্লানিমাখা পাক হানাদার আর তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা। বধ্যভূমিতে বড় অসহায় দশায় নিঃশেষে প্রাণ দেন আমাদের সেরা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা।

রণক্ষেত্রে বীর বাঙালীর হাতে নাস্তানাবুদ হয়ে শেষে এ জাতিকে মেধাশূন্য করতে সুদূরপ্রসারী ঘৃণ্য নীলনক্সা আঁকা হয়েছিল। ঘাতকরা চেয়েছিল জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে। স্বাপদীয় জন্তুর মতো আঁধারে নেমেছিল দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ। এ রাতেই তালিকা ধরে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। হত্যা করে ফেলে রাখা হয় নিস্তব্ধ ভুতুড়ে অন্ধকারে। জাতি হারায় তার অসংখ্য মেধাবী সন্তানকে। পরদিন ঘুম থেকে জেগে প্রায় ছুঁই ছুঁই স্বাধীনতার আনন্দে উদ্বেল মানুষ জানতে পারেন এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা। মুহূর্তে স্থবির হয়ে যায় সব আনন্দ-কোলাহল। অন্যদিকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে উল্লাসে ফেটে পড়ে এ দেশীয় নরঘাতকরা।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও গোটা বাঙালী জাতি আজ গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে দেশের শহীদ কৃতী সন্তানদের। করোনার কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শোকাহত মানুষের ঢল নামবে সেদিনের সেই হত্যাযজ্ঞের স্মৃতিবিজড়িত রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিস্তম্ভে। সেখানে অর্পণ করা হবে পুষ্পার্ঘ্য। শোকে আপ্লুত বাঙালী গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে প্রয়াত বুদ্ধিজীবীদের। বেদিমূল ঘিরে থাকবে তাদের পরিবারের সদস্য, ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীদের চাপা কান্না ও অশ্রুতে ভিজে উঠবে স্বজনের আনা ভালবাসার অর্ঘ্য। দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। শোকের প্রতীক কালো পতাকাও উড়বে।

আরবিসি/১৪ ডিসেম্বর/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category