স্টাফ রিপোর্টার: ভেসে আসছে ঢাকঢোল আর সানাইয়ের সুর। অতিথিদের সরগরমে বাসাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। সাজানো হয়েছে বর-কণে। বর হচ্ছে বট গাছ ও পাকুড় গাছ হচ্ছে কণে। কন্যা সম্প্রদানের জন্য প্রস্তুত পরিবারের লোকজন। মাঝে মাঝে উলুধ্বনি। একদল নারী নেচেই যাচ্ছেন। ফাঁকে ফাঁকে চলছে বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু কোনো মানুষের নয়, বিয়ে হলো বট আর পাকুড় গাছের। এই বিয়ের জন্য রীতিমতো মহা-আয়োজন করা হয়েছিল রাজশাহীর খড়খড়ির শ্রী শ্রী গোপালদেব ঠাকুর মন্দিরে।
১১৩ বছরের পুরনো এ মন্দির প্রাঙ্গণে ১৭ বছর আগে পাশাপাশি লাগানো হয়েছিল গাছ দুটি। হিন্দুশাস্ত্রমতে, পাশাপাশি বট-পাকুড় গাছ থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। এই রীতি মেনেই শনিবার ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হলো গাছ দুটির। বটকে বর, পাকুড়কে কনে ধরে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের আগে বটের নাম রাখা হয় ‘বিজয়’। আর পাকুড় হয় ‘বনলতা’।
বিয়ের জন্য মন্দিরে প্রবেশের পথেই বানানো হয় গেট। সাজিয়ে তোলা হয় বট-পাকুড়সহ গোটা মন্দির প্রাঙ্গণকেই। পাশেই প্যান্ডেল বানিয়ে চলছিল অতিথিদের খাওয়া-দাওয়া। নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। তাদের জন্য রান্না করা হয় পোলাও, সবজি ঘণ্ট আর পায়েস। পাতে দেওয়া হয়েছিল জলপাইয়ের আচার এবং কিছু পাপড়ও।
বর-কনের পাশে ছাদনাতলা সাজানোর পর দুপুর ১২টায় সেখানে নারায়ণ পূজার মধ্য দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুরে দল বেঁধে নারীরা পুকুরে গিয়ে গঙ্গাপূজা সেরে আসেন। জল দিয়ে ভরে আনেন ঘটক। সবাই মিলে পালের বাড়ি থেকে আনেন হাঁড়ি। বিকাল ৪টা থেকে ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের নিবেদন। কিছুক্ষণ পরই একদল নারী আসেন বরযাত্রী হয়ে। গেটে বাতাসা খাইয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাদের। বাদ্য-বাজনা আরও বেড়ে যায়। এবার নেচে ওঠেন সব বয়সী মানুষই। বর-কনের চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকেন অতিথিরা। পুরোহিত পুলক আচার্য শুরু করেন বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ঠিক গোধূলিলগ্নে মন্ত্র পড়ে বিয়ে সম্পন্ন করেন পুরোহিত।
এই বিয়েতে বটের বাবা-মা হয়েছিলেন বিধান চন্দ্র সরকার ও আরতি রানী সরকার দম্পতি। বিশ্বজিৎ সরকার ও কনিকা রানী সরকার দম্পতি হন পাকুড়ের বাবা-মা।
কনিকা বললেন, ‘বাস্তবে আমি দুই ছেলের মা। ১০ দিন আগে পাকুড়ের মা হই। মেয়ের বিয়েও দিলাম। এ অনূভূতি অন্যরকম। মেয়ের বিয়ে দিলে যেমন আনন্দ লাগে, আজ আমার তেমনই লাগছে।’
আরবিসি/১১ ডিসেম্বর/ রোজি