• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

কুয়েটের ৯ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

Reporter Name / ১০০ Time View
Update : শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : ছাত্র শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গ করায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

শনিবার (৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার বিষয়টি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৭৬তম (জরুরি) সভায় উত্থাপন করা হলে সিসিটিভির ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি পর্যালোচনা করে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা ও আচরণবিধির আলোকে অসদাচরণ এর আওতায় সিন্ডিকেট নিম্নবর্ণিত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বহিষ্কারকৃতরা হলেন- সাদমান নাহিয়ান সেজান, সিএসই বিভাগ, রোল-১৩০৭০২৪, তাহামিদুল হক ইশরাক, সিই বিভাগ, রোল-১৫০১০৯০, সাদমান সাকিব, এলই বিভাগ, রোল-১৫১৯০৩৩, আ. স. ম. রাগিব আহসান মুন্না, এলই বিভাগ, রোল-১৫১৯০৪৮, মাহমুদুল হাসান, সিই বিভাগ, রোল-১৬০১০২৯, মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান, এমই বিভাগ, রোল-১৬০৫০৩৯, রিয়াজ খান নিলয়, সিএসই বিভাগ, রোল-১৬০৭০৭৫, ফয়সাল আহমেদ রিফাত, এমই বিভাগ, রোল-১৬০৫০৯৩, নাইমুর রহমান অন্তু, এমএসই বিভাগ, রোল-১৬২৭০১০।

মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)।

সম্প্রতি কুয়েটের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার জন্য ড. সেলিমকে চাপ দেন। ঘটনার দিন দাপ্তরিক কক্ষে অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হন তিনি। ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা শুরু করেন। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য ক্যাম্পাসের কাছে বাসায় যাওয়ার পর ২টায় তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে অপমৃত্যুর অভিযোগ এনে ড. মো. সেলিমের কফিনসহ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে বিচার চান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলার জোর দাবি জানান।

প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই দিন রাতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম।

এছাড়া দুইজন সদস্য হলেন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান ও ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার। তবে, এদের মধ্যে থেকে অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার লিখিত ভাবে ও ড. মো. আরিফুল ইসলাম অলিখিত ভাবে তদন্ত করতে অপারগতা জানিয়েছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির এই দুই সদস্য ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ চালাতে বিব্রতবোধ করছেন। সেলিমের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে শুক্রবার রাতে পাঁচ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সিন্ডিকেট সভা ‍অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় কুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা অংশ নেন।

ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তাল হওয়ায় এ জরুরি সিন্ডিকেট সভার ডাক দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

৩ ডিসেম্বর দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর ৭টি আবাসিক হলে থাকা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হল ছাড়েন।

আরবিসি/০৪ ডিসেম্বর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category