আরবিসি ডেস্ক : আরেকটি টেস্ট, আরেকটি প্রত্যাশা! নতুন প্রত্যাশা নিয়ে শনিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ভালো কিছুর আশায় মুমিনুল হকরা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে সকাল ১০টায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, টি স্পোর্টস ও গাজী টেলিভিশন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের পর চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টও হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। হারের বৃত্ত ভেঙে বাংলাদেশের সামনে তাই শেষটা রাঙানোর সুযোগ। শনিবার ঢাকায় আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে মাঠে নামছে স্বাগতিকরা। এই টেস্টে অভিজ্ঞ সাকিব ফেরায় বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তির সুবাতাস। অধিনায়ক মুমিনুলও অনেকটাই নির্ভার।
গত মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেললেও মিরপুরে সাকিব ফিরছেন দীর্ঘদিন পরই। তিন বছর আগে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন এই অলরাউন্ডার। সাকিবের নেতৃত্বে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ইনিংস ও ১৮৪ রানের বড় ব্যবধানে। ব্যাটে-বলে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিন বছর পর মিরপুরে যখন সাকিব ফিরছেন, তখন নেতৃত্বের ভার মুমিনুলের কাঁধে। সাকিবকে পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত মুমিনুল ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘উনি (সাকিব) থাকলে অধিনায়ক হিসেবে আমি নির্ভার থাকি। তার ব্যাটং-বোলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি থাকলে আমাদের টিম কম্বিনেশনও ভালো হয়।’
তিন বছর আগে ঢাকা টেস্টে সাকিব দারুণ পারফরম্যান্স করলেও সাম্প্রতিক ফলাফল তার হয়ে কথা বলছে না! বিশ্বকাপে ফর্মহীনতার পর মাঝপথেই ইনজুরিতে ছিটকে যান। একই কারণে খেলার সুযোগ হয়নি পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। চট্টগ্রাম টেস্টে খেলার কথা থাকলেও ফিটনেসহীনতায় সেখানেও খেলার সুযোগ হয়নি। শনিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন, সেটিই দেখার। অধিনায়ক মুমিনুল অবশ্য সাকিবকে নিয়ে প্রত্যাশার কথাই শুনিয়েছেন।
সাকিবের ফেরা মুমিনুলকে নির্ভার করলেও একটি পরিসংখ্যান অবশ্য হতাশা ছড়াচ্ছে। মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। দুটোতেই হেরেছে মুমিনুলরা। ২০১১ সালে মুশফিকের নেতৃত্বে লড়াই করলেও ৭ উইকেটে হারতে হয়েছিল। চার বছর পর ২০১৫ সালে মুশফিকের নেতৃত্বেই ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৩২৮ রানের ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। সাড়ে ৬ বছর পর আরেকটি লড়াই। মিরপুরের বৈচিত্র্যময় উইকেটে মুমিনুলের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তো বাংলাদেশ?
অন্য সব ম্যাচের মতো এই টেস্টের আগেও প্রত্যাশার কথাই শোনালেন মুমিনুল, ‘সাকিব ভাই ফেরায় আমাদের শক্তি অবশ্যই বেড়েছে। প্রথম একঘণ্টা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভালো শুরু এনে দিতে পারলে ভালো হবে। প্রথম ঘণ্টায় শুরুটা জরুরি। ওটা ভালো করতে পারলে আমরা ম্যাচে থাকতে পারবো। আশা করি, এই টেস্টে আমরা প্রত্যাশা মতো পারফরম্যান্স করতে পারবো।’
এদিকে বাংলাদেশের অধিনায়ক জয়ের প্রত্যাশা করছেন, আর ওদিকে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলা শাহীন আফ্রিদি পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মুখিয়ে আছেন। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভালোভাবে শেষ করতে চাই। এখান থেকে সিরিজ জিতে ফিরতে চাই। আমাদের মোমেন্টাম ভালো। কম্বিনেশন ভালো। সবাই দ্বিতীয় টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত। আশা করি, দারুণভাবেই শুরু করতে পারবো।’
চট্টগ্রামের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে ব্যাটাররা খেই হারিয়েছেন পাকিস্তানের বোলারদের সামনে। দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগে তাই উইকেট নিয়ে বিস্তর আলোচনা। পাকিস্তান এমন এক প্রতিপক্ষ, যাদের বিপক্ষে মিরপুরের স্বভাবজাত স্পিন উইকেট বানিয়ে ভালো কিছু আশা করা সম্ভব নয়।
তাই সংবাদ সম্মেলনে এসে স্পিন উইকেটের বিপক্ষেই কথা বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘আমার কাছে মনে হয় উপমহাদেশের দলগুলোর বিপক্ষে স্পিন উইকেট না খেলাই উচিত। আমি ফ্লাট উইকেটই পছন্দ করি। তবে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেমন উইকেট খেলেছি, তেমনটা এখানে হবে না। আজকে (শুক্রবার) দেখে সেটাই মনে হয়েছে।’
ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের কম্বিনেশন কেমন হবে, সেই ব্যাপারে কিছুটা ধারণা দিয়েছেন মুমিনুল। টাইফয়েডে ওপেনার সাইফ হাসান ছিটকে যাওয়ায় এবং সাকিব ফেরার ম্যাচে নিশ্চিতভাবেই দুটি পরিবর্তন আসছে। ওপেনিংয়ে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন আনলে সাদমান ইসলামের সঙ্গে দেখা যেতে পারে যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয়কে। তবে ওই কম্বিনেশনে না গেলে সাদমানের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তকে ওপেনিংয়ে দেখা যেতে পারে।
পাকিস্তান কোচ সাকলায়েন মুশতাকের সঙ্গে অধিনায়ক বাবর আজম
মিরপুরে এক পেসার নিয়েও খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাসকিন আহমেদকে নিয়ে ঝুঁকি না নিলে আবু জায়েদ রাহীর একাদশে থাকার সম্ভাবনা বেশি। ব্যাটিং শক্তি বাড়াতে খেলানো হতে পারে প্রথম টেস্টে অভিষিক্ত ইয়াসির আলীকে। অন্যদিকে সাকিব-তাইজুল-মেহেদীকে নিয়ে হতে পারে স্পিন আক্রমণ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ১১ টেস্টেই হেরেছে। ২০১৫ সালে খুলনা টেস্ট কেবল ড্র করতে পেরেছিল। হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোর মধ্যে ৫ টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। শনিবার শুরু হওয়া আরেকটি লড়াইয়ে বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারবে কিনা, সেটাই দেখার।
আরবিসি/০৩ ডিসেম্বর/ রোজি