আরবিসি ডেস্ক : সাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এ পরিণত হয়েছে। ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
জাওয়াদ আরও শক্তিশালী হয়ে আগামীকাল শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকাল নাগাদ ভারতের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাসহ সুন্দরবন, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। ইতোমধ্যে ভারতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ এখন মেঘলা। সন্ধ্যার পর উপকূলীয় কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এ পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত পূর্বাভাস অনুযায়ী ঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের ওপর দিয়ে যেতে পারে।
ঝড়ের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং দেশের অন্য এলাকায় আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সকালের দিকে সারাদেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এর কিছু প্রভাব বাংলাদেশের সুন্দরবনসহ সাতক্ষীরা, খুলনাসহ আশপাশের এলাকায় পড়তে পারে। তবে আজ ঝড়ো হাওয়া বা বৃষ্টির শঙ্কা নেই। আগামীকাল বিকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।’
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এ পরিণত হয়েছে। এটি সকালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ২৩০ কিলোমিটার দূরে, এখন তা আরও একটু এগিয়ে ১ হাজার ১০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ১৬৫ কিলোমিটার, এখন ১ হাজার ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ১৬০ কিলোমিটার, এখন ৯৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার, এখন ৯৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্যও বলা হয়েছে।
২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেতের অর্থ হচ্ছে দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে পড়তে পারে।
এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নামটি রেখেছে সৌদি আরব। আরবি শব্দ ‘জাওয়াদ’-এর অর্থ উদার বা করুণাময়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর সবশেষ সেপ্টেম্বরে উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’। আর মে মাসে ‘ইয়াস’।
বাংলাদেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপ হয়ে এখন ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ হিসেবে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং দেশের অন্য এলাকায় আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সকালের দিকে সারাদেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।
আরবিসি/০৩ ডিসেম্বর/ রোজি