• শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন

উত্তরে কমছে তাপমাত্রা, ডিসেম্বর থেকে শৈত্যপ্রবাহ

Reporter Name / ৯৬ Time View
Update : শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক: অগ্রহায়ণের শেষ ভাগে এসে রংপুরে দিন দিন বাড়ছে শীতের তীব্রতা। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে হাড় কাঁপানো শীত। হিমেল হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে ঘন কুয়াশা। সন্ধ্যা নামতেই সড়কে আলো জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। ঘরে বাইরে উষ্ণতা পেতে শরীরে উঠেছে মোটা কাপড়।

আবহাওয়া অফিস বলছে, ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে শৈত্যপ্রবাহ। এ সময় তাপমাত্রা কমতে থাকবে। বাড়বে শীতের তীব্রতা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই অঞ্চলে কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

এদিকে শীত মৌসুমের প্রথম ধাক্কা সইতে পারছে না শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শহর থেকে একটু দূরে গ্রামে থাকা ছিন্নমূল, অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা নাকাল। আগাম শীতের প্রকোপ মোকাবিলায় প্রস্তুতি না থাকায় অনেকেই কষ্টে আছেন।

শুক্রবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত রংপুর নগরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সাতসকালে কাজের প্রয়োজন বের হওয়া সাধারণ মানুষ ছিল গরম কাপড়ে মোড়ানো। নগরীর শাপলা চত্বর এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে কাজের সন্ধানে আসা দিনমজুরদের জবুথবু হয়ে বসে থাকতেও দেখা গেছে। রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, কাউনিয়া, পীরগাছা, তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলার নিভৃত গ্রামগুলোতেও শীত জেঁকে বসার তথ্য পাওয়া গেছে।

শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াতে। এখানে আজকের তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হিমেল হাওয়ায় সঙ্গে ঝিরিঝিরি জলফোঁটায় ভিজে গেছে প্রকৃতির বুক। দিগন্ত জোড়া মাঠে প্রতিদিনের মতো কাজে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণী। শীতের সকালে সবুজের ক্ষেতবুননে তাদের কাছে লাপাত্তা শীত। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনের পাশাপাশি গবাদি পশুপাখিও টের পাচ্ছে শীতের তীব্রতা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ ভেদ করে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ায় স্বস্তি ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়।

রংপুর নগরের ময়নাকুটি এলাকায় ইমাম হোসেন বলেন, ‘হামার মতো গরিব মাইনসের মোটা কাপড় দরকার। ভোরবেলা খুব শীত পড়ে। সন্ধ্যা হইলে গাও কাঁপে। মাঘ মাস নাই আসতে যে শীতের তীব্রতা, তাতে গ্রামের কামলা মাইনসের অবস্থা খুব খারাপ।’
একই গ্রামের কৃষক জহুর আলী বলেন, শীতের সময় আমাদের কষ্ট বেশি। কিন্তু উপায় নেই, কাজ তো করতেই হবে। কেউ কেউ সন্ধ্যার সময় খোলা জায়গায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। কিন্তু মধ্যরাত থেকে লেপ-তোষক ছাড়া ঘুমানো মুশকিল। এদিকে দিন দিন শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকায় রংপুরের হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও অ্যাজমাসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে শীতজনিত রোগে প্রায় ১৩শ শিশু ও বয়স্ক রোগী ভর্তি হয়েছে।
রমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এসএম নুরুন্নবী শীতজনিত রোগ প্রতিরোধে শিশুদের চিকিৎসার পাশাপাশি গরম কাপড় ও উষ্ণতার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই অঞ্চলে বরাবরই শীতের প্রকোপ বেশি। শীতকালে উত্তর জনপদে শীতজনিত রোগের প্রকোপ অনেকটা বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে শিশু ও বয়স্কদের ওপর।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে শীতের প্রকোপ আরও বাড়বে। সঙ্গে দিন দিন তাপমাত্রা কমতে থাকবে। তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা কমে কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে রংপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে।

আরবিসি/২৬ নভেম্বর/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category