স্টাফ রিপোর্টার : তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। কারণ তাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে জনমত গঠন জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা ও অনুশাসন প্রদানে ধর্মীয় নেতারাই সব চেয়ে বেশি দায়িত্ব ও অনুভূতিশীল। সমাজের সবাইকে সচেতন করতে তারাই অন্যতম সহায়ক শক্তি।
সোমবার (২২ নভেম্বর) সকালে রাজশাহী মহানগরীর একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এক সভায় বক্তারা এই অভিমত প্রকাশ করেন। বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ‘রাইট হেয়ার রাইট নাও-২’ প্রকল্পের আওতায় ধর্মীয় নেতাদের সাথে লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর সামাজিক অধিকার নিশ্চিতকরণ ও যুবদের যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক এই সংবেদনশীল সভা আজ অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা বলেন- তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রাষ্ট্রীয়ভাবে কাগজে কলমে স্বীকৃতি পেলেও মেলেনি সামাজিক, পারিবারিক সম্মান, অধিকার। মৌলিক ও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এ জনগোষ্ঠী বর্তমানে সমাজে অবহেলিত ও অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসেবে বিদ্যমান। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, শিক্ষা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন, নিরাপত্তাসহ বিভিন্নভাবে হিজড়া জনগোষ্ঠী সমাজ ও পরিবার থেকে প্রতিনিয়ত বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে। অথচ দেশের নির্দিষ্ট এই জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে কখনোই সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই হিজড়া জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হবে।
সভায় লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর সার্বিক অবস্থা তুলে ধরার মাধ্যমে এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও সামাজিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সভায় অংশগ্রহণকারী ধর্মীয় নেতারা আগামীতে লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা, ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা এবং জীবনমান উন্নয়নে একযোগে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি মাদ্রাসা পাঠ্যক্রমে যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক অধ্যায়সমূহ গুরুত্ব সহকারে পাঠদান করবেন বলেও অঙ্গিকার করেন।
সভায় বিভিন্ন ধর্মের ২০ জন ধর্মীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। সভাটি সঞ্চালনা ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর বর্তমান অবস্থান এবং যুবদেরকে যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা করেন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সহকারী ব্যাবস্থাপক তানভীর ইসলাম। সভায় ইসলাম ধর্মে লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন- রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা সদর জামে মসজিদের পেশইমাম মওলানা আনোয়ার হোসেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বন্ধু ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির মিডিয়া ফেলো শরীফ সুমন ও হিন্দু -বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নগর সাধারণ সম্পাদক শ্যমল কুমার ঘোষ। এছাড়া দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা মঈনসহ লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরবিসি/২২ নভেম্বর/ রোজি