• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন

ফখরুলের হুংকার ‘আন্দোলন, আন্দোলন আর আন্দোলন’

Reporter Name / ১২৯ Time View
Update : সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক: খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জেলায় জেলায় স্মারকলিপি দেওয়ার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার দল বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে দ্রুত ‘মুক্তি না দিলে কঠোর থেকে কঠোরতর’ কর্মসূচি দেবেন তারা।
সোমবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির হাজার খানেক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, “আমাদের সামনে এখন আর কোনো পথ খোলা নেই। আমাদের সামনে একটাই পথ, আন্দোলন, আন্দোলন আর আন্দোলন। এ আন্দোলনকে তীব্র করে সামনের দিকে আরও বেগবান করতে হবে।”

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে ফখরুল বলেন, “আগামী ২৪ তারিখে আমাদের সকল জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করবে- এই হচ্ছে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি। “যদি তারপরেও দেশনেত্রীকে মুক্তি দেওয়া না হয়, আরো কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচির দিকে আমরা এগিয়ে যাব।”

৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আরথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, যেহেতু দণ্ড স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে।

তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির দাবিতে গত ২০ নভেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে ৭ ঘন্টার গণঅনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সেই অনশন হয়। সেখান থেকেই সোমবার এই বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। সমাবেশে যোগ দিতে নেতা-কর্মীর সকাল থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতে জড়ো হতে থাকেন। ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম। মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

অতীতের আন্দোলনের প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল দলের নেতাকর্মীদের বলেন, “একটা কথা মনে রাখতে আমার দলের ভাই-বোনদের বলতে চাই, হটকারিতা করবেন না। অতীতে অনেক হটকারিতার জন্য আমাদেরকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করি, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে আমাদের দেশনেত্রীকে মুক্ত করব।”

আর সেই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন একসাথে গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি, গণতন্ত্রকে মুক্ত করি এবং আগামী দিনে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমাদের একটাই কথা, আমরা আমাদের প্রিয় নেত্রী, আপসহীন নেত্রী, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য যার অবদান অনস্বীকারর্য, সেই নেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই। আর তিনি মুক্তি পেলে তার চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা সুযোগ নিতে পারব, বিদেশে চিকিৎসা করাতে পারব।

“এই চিকিৎসায় বাধা সরকারের অনৈতিক, ফ্যাসিবাদী চরিত্রের নগ্নপ্রকাশ। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ার যে চক্রান্ত, এই চক্রান্ত রোখার জন্য আমাদেরকে সচেষ্ট হতে হবে, জীবন-পণ যুদ্ধ করতে হবে। সরকারকে বলব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশনেত্রীকে মুক্তি দেন, যত বিলম্ব করবেন বিড়ম্বনা তত বাড়াবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “এ বিষয় নিয়ে কোনো আন্দোলন হওয়ার কথা না। ৭৬ বছর বয়স্ক একজন নারী, যিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, দুইবার বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন, যিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, যিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, তিনি আজকে গুরুতর অসুস্থ। ডাক্তাররা বলেছেন, তার চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়।

“আইনজীবীরা বলছেন, তাকে বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু আইনমন্ত্রী বলছেন, সুযোগ দেওয়া যায় না, বিএনপি অসন্তুষ্ট হলেও কিছু করার নেই। তিনি চাকরির মায়া বেশি করেন। তার কাছে আইনের কোনো গুরুত্ব নাই। তার চোখের সামনে দিয়ে ফাঁসির আসামি মুক্ত হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুক্ত হয়ে যায়।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, সরকার আমাদের দেশনেত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দিলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। যতক্ষণ দেশনেত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। ঢাকা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

সকাল সাড়ে ১০টায় থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিএনপির এই সমাবেশ হয়। রাস্তার ওপর ভিড়ের কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সেজন্য সমাবেশে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, “সরকারকে বলেছি এই জায়গায় (জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে) বিএনপির সমাবেশ করার মত জায়গা নাই। আমরা পুলিশ কমিশনারকেও বলেছিলাম, হয় আমাদেরকে পার্টি অফিসের (নয়া পল্টনে) সামনে সমাবেশ করতে দেন। আর তা না হলে জায়গা নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কথায় সাড়া দেয় নাই।

“আজকে নেতা-কর্মীরা কষ্ট করে এখানে এসেছেন। যানবাহনের যাত্রী ভাইয়েরা এই রাস্তায় যারা চলাচল করেন, রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় আপনারা ভিড়ে অসুবিধায় পড়েছেন। আমি এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।” মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, নাজিমউদ্দিন আলম, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন বক্তব্য দেন।

আরবিসি/২২ নভেম্বর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category