স্টাফ রিপোর্টার : পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্প সমূহের চলমান অগ্রগতি বজায় রাখার স্বার্থে বাজার দর অনুযায়ী নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য সমন্বয় করার দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১ টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী পাউবো রাজশাহীর প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে পাউবো ঠিকাদার সমিতির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল জোন কমিটি। পরে একই দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি বাপাউবো উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে মহাপরিচালক বরাবার প্রদান করা হয়।
এর আগে মানববন্ধন চলাকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাজা তারেকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, পাউবো ঠিকদার সমিতি রাজশাহীর সভাপতি মাহফুজুল আলম লোটন, রাজশাহী চেম্বারের সাবেক পরিচালক মো. জামাত খান, পাউবো ঠিকাদার সমিতির উপদেস্টা তপন কুমার সেন, আতিকুর রহমান মন্টু, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, চাপাইনবাবগঞ্জ পাউবো ঠিকাদার সমিতি নেতা সাইফুল ইসলাম রাজু, নাটোরের ঠিকাদার মোল্লা সারোয়ার হোসেন মুক্তা, মাসুদ রানা শাহীন, নওগাঁ ঠিকাদার সমিতির নেতা সাজেদুল আলম লাল্টু, রাজশাহী চেম্বারের পরিচালক হাবিবুল্লাহ ডলার, রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাংগাঠনিক সম্পাদক গোলাম নবী রণি ও জোবয়েদ হোসেন জিতু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মহামারীর প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিফল হিসাবে বাংলাদেশেও নির্মাণ সামগ্রী যেমন- পাথর, বালু, সিমেন্ট, ইট, জিও ব্যাগ, জিও সীট, রড, সীট পাইল এবং ডিজেল ইত্যাদি খাতের প্রায় সকল প্রকার দ্রব্যাদির মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় বাপাউবোর আওতাধীন চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নিরবচ্ছিন্ন অগ্রগতি বজায় রাখার স্বার্থে বাজার দর অনুযায়ী অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া পণ্যের দাম সমন্বয় ছাড়া কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, নির্মাণ কাজে পাথর, বালু, সিমেন্ট, জিও ব্যাগ এবং সীট পাইলের ব্যবহার সর্বাধিক। প্রতি ঘনমিটার পাথরের বাজার মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বাজার মূল্য টাকা ৮,৮০০ টাকাতে পৌছেছে। অন্যান্য সামগ্রীর মূল্যও শ্রেণিভেদে ২৫-৩০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিক, সুপারভাইজার ও দক্ষ জনবলের মজুরীও ৩০-৪০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্পের অগ্রগতি মন্থর হয়ে পড়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য ঊর্ধ্বগতিতে ঠিকাদাররা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকল্পের কাজ চালাতে এবং নতুন কোন দরপত্রে অংশ গ্রহণ করার সাহস পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নতুন করে আর ব্যাংক ঋণও মিলছে না।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, চলমান অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির প্রবণতা রোধ সম্ভব না হলে প্রকল্পের অগ্রগতিতে স্থবিরতা দেখা দিবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান বাজার মূল্য বিশ্লেষণ সাপেক্ষে নতুন রেট সিডিউল প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অন্যথায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবেনা বলও হুশিয়ারি দেন সংশ্লিষ্টরা।
স্মারকলিপিকে আরো উল্লেখ করা হয়, দেশে যখন বন্যায় প্লাবিত হয়ে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন শুরু হয়-আপদকালীন সময়ে ঠিকাদাররা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলি জরুরী ঘোষণা পত্র পাওয়া মাত্রই তীব্র নদী ভাঙ্গন প্রতিরক্ষামূলক কাজে এগিয়ে আসেন। এই সময়ে অনেক প্রতিকুলতার সম্মুখিন হতে হয়। ভরা নদীতে কোন প্রকার বালু পাওয়া যায় না, বৃষ্টির সময় শ্রমিক সংকট দেখা দেয়, নৌকা ব্যবহার করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, এছাড়াও নানাবিধ সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। এরপরেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসমূহ আপদকালীন জরুরী কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে। স্মারকলিপিতে বক্তারা আপদকালীন জরুরি কাজ বাস্তবায়নের অর্থ বরাদ্দ ও পরিশোধ করার জন্য অনুরোধও জানান।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, এডিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ছাড়াও সারাদেশে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থার জন্য অর্থ বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। স্মারকলিপিতে পাউবো চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নিরবচ্ছিন্ন অগ্রগতি বজায় রাখার সার্থে বাজার দর অনুযায়ী অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া সামগ্রীর দর সমন্বয় করার দাবি জানানো হয়।
আরবিসি/১৭ নভেম্বর/ রোজি