• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ
রাবির ৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, ৩৩ জনের নানা মেয়াদে শাস্তি রাজপাড়া থানার নতুন ভবন উদ্বোধন করলেন আরএমপি পুলিশ কমিশনার উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক পাকিস্তানি চিনি, আলুসহ শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে এলো সেই জাহাজ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ মারা গেছেন রাজশাহীর চারঘাটে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ সার সঙ্কটে রাজশাহীতে ব্যাহত হচ্ছে আলুচাষ, দামও অতিরিক্ত রাজশাহীতে ফের বাস ও সিএনজি চালকের সংঘর্ষ, দুই পক্ষের মীমাংসা স্থগিত কিডনি রোগীর চিকিৎসা আর আইফোন কিনতে ডাকাতির চেষ্টা: পুলিশ তনুর গ্রাফিতিতে পোস্টার সাঁটানো নিয়ে যা বললেন মেহজাবীন

নিভৃতে বাস করেও ঢেউ তুলেছিলেন সাহিত্যাঙ্গনে

Reporter Name / ৪২৪ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : হেমন্তের শেষভাগে যখন কৃষকের ঘরে ফসল তোলার আনন্দ, তখনই বাংলা সংস্কৃতি-সাহিত্য জগতে নামল শোকের ছায়া। বাংলা সংস্কৃতির বটবৃক্ষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করা হচ্ছিল উপমহাদেশ জুড়ে। এমনই দিনে তাঁরই পথ ধরে নশ^র পৃথিবী ছেড়ে অনন্ত যাত্রায় চললেন বাংলা কথাসাহিত্যের বরপুত্র হাসান আজিজুল হক। এ যেন রবি ঠাকুরের ভাষায়-‘ গভীর রজনী নামিল হৃদয়ে’।

বয়সের ভারে শরীরটা বিছানায় পড়ে গেলেও মনটা ছিল তাঁর সজীব। দারুণ গল্প ও আড্ডাবাজ ছিলেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। বন্ধু, স্বজন ও শুভাকাঙ্খিদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া ছিল তার বেশ পছন্দ। মনটা ছিল শিশু সুলভ।
রাস্তায় বেরোলেই কথা বলতেন একবারে সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তার আলাপচারিতা থেকে বাদ যেতনা সাধারণ পথচারীও। সবার সঙ্গে মিশতে ও কথা বলতে পছন্দ করতেন তিনি। অনেকটা প্রাণবন্তভাবে হেসে-খেলেই জীবনের শেষ সময়টা পার করতে চেয়েছিলেন বিশিষ্ট এ কথাসাহিত্যিক। কিন্তু বয়সের কারণে শরীরে বাসা বাধে নানা অসুখ। চিকিৎসাও শুরু হয়। বিছানায় শুয়ে দীর্ঘ একটা সময় চিকিৎসা নেন তিনি। তবে এতকিছুর পরও শেষ দিনগুলোতে কোনো অভিযোগ, অনুযোগ ছিল না বাংলা গল্পের রাজপুত্র খ্যাত এ কথাসাহিত্যিকের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে রাজশাহী আনার পর তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো ছিল। স্বজনদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। উঠে বসতে পারতেন। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকঠাকভাবে করছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. আরাফাতের নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল টিমের তত্ত্বাবধানে রাজশাহী মহানগরের বিহাসের নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার দেখাশোনা করতে নিয়মিতভাবে একজন নার্স আসতেন।

পরিবারের সদস্যরা সার্বক্ষণিক তার পাশে ছিলেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পর তার শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হয়। এরপর সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতেন। শেষদিকে খাওয়া-দাওয়া করতে পারছিলেন না। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। সবাই মিলে তার সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করতেন। যদিও শেষের দিকে খুব একটা কথা বলতে পারছিলেন না। কিন্তু যখন ভালোভাবে কথা বলতেন- তখন তার মুখে কোনো অভিযোগ বা অনুযোগের কথা শোনা যায়নি।
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে শোকের সাগরে রূপ নিয়েছে তার বাসস্থান ‘উজান’। রাতের আঁধার ছাপিয়ে গেছে প্রিয়জন হারানোর শোক। দরজায় নুয়ে পড়েছে প্রিয় বাগান বিলাস।

রাতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সহকর্মী, স্বজন, শিক্ষার্থী, ভক্ত এবং শুভাকাঙ্খিদের ভিড় জমে উজানে। মানুষের কমতি না থাকলেও কারো মুখে কথা নেই।

নগরীর চৌদ্দপায় এলাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাউজিং সোসাইটি বিহাস। এখানেই নিবাস গড়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কথাসাহিত্যিক। বাড়ির নাম দিয়েছিলেন ‘উজান’। স্ত্রী, তিন কন্যা ও এক পুত্র নিয়ে জীবনের বহু বসন্ত এখানেই কাটিয়েছেন তিনি। এখানেই সাহিত্য চর্চা করে গেছেন গুণী এই কথাসাহিত্যিক। সোমবার রাতে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আজিজুল হক।
বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং হাইপোন্যাট্রিমিয়ায় ভুগছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। চিন্তা ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়।

দর্শনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক হওয়ার সুবাদে জীবনকে ভিন্নভাবে দেখার এক অনন্য কৌশলের অধিকারী ছিলেন হাসান আজিজুল হক। গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠার সুবাদে প্রান্তিক মানুষের জীবনকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সাধারণ মানুষদের সঙ্গে অবলীলায় মিশে যেতেন বলে তাদের ভাব-ভাষা-ভঙ্গি-ভাবনা সবই ছিল তার নখদর্পণে। দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, দাঙ্গা, পাকিস্তানি জান্তার অপশাসনের মতো সব অভিজ্ঞতাও জীবন দিয়ে বুঝে নিয়েছিলেন। তাই হাতে যখন কলম তুলে নিয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক, জীবনের সেই অভিজ্ঞতাই হয়ে দাঁড়াল তার লেখনির শক্তি। মানুষের জীবন, ধর্ম, রাজনীতি, ক্লান্তিকর যাপন, বিভক্তি, দেশ, রাষ্ট্র, মনোজগত— সবকিছুরই স্ফূরণ ঘটতে থাকল। নিজস্ব ভঙ্গির ভাষা আর গদ্যরীতিতে হয়ে উঠলেন ছোটগল্পের জাদুকর।

তবে সেই যে প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে সখ্য, সেটিই বোধহয় হাসান আজিজুল হকের অন্তর্কথা, একান্ত নিজস্ব অনুভূতি। সে কারণেই ঢাকা নয়, প্রকৃতিঘেরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই ছিল তার চিরআপন। অধ্যাপনার পর অবসরেও ঢাকার নাগরিকতায় মানিয়ে নিতে আসেননি। নিভৃতেই পাঠক-ভক্ত-শিক্ষার্থী-সহকর্মীদের ভালোবাসা নিয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থেকে গেছেন রাজশাহী শহরেই। তবে তার লেখনি দিয়ে বরাবরই ঝড় তুলেছেন সাহিত্যাঙ্গনে। কোলাহল থেকে দূরে তার নিজ নিবাসের প্রয়াণও একইরকমভাবেই ঢেউ তুলে গেল গোটা দেশে।

আরবিসি/১৬ নভেম্বর/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category