• বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন

ভরাডুবির বিশ্বকাপে শেষটাও লজ্জার

Reporter Name / ১৪৬ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ঢুকতে গিয়ে হোঁচট খেতে হলো! কিছুটা চমকেও গেলাম। এ দেখি বিরান ভূমি। চারপাশে অন্যরকম নীরবতা। একটু পর এখানে একটা বিশ্বকাপ ম্যাচ হবে, মাঠের বাইরের পরিবেশ দেখে সেটি বোঝার উপায় নেই। শারজাহ কিংবা আবুধাবিতে দেখেছি প্রবাসী দর্শকদের সে কী উন্মাদনা। আর এখানে হাতে গোনা কিছু সমর্থক ছাড়া কারও দেখা মিলছে না।

অবশ্য এমনটা হবেই বা না কেন? বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে প্রবাসীদের প্রত্যাশার বেলুন যে আগেই চুপসে গেছে! এমন ছন্নছাড়া ক্রিকেট আর যাই হোক কাজ বাদ দিয়ে দেখার কোন মানে হয় না।

বাংলাদেশ চেয়েছিল শেষটা অন্তত জয়ে রাঙাতে। কিন্তু সেটি ওই চাওয়া পর্যন্তই, করে দেখাতে আর পারেনি। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচটাও হেরে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করল বাংলাদেশ। মূল পর্বে ৫ ম্যাচ খেলে হারল পাঁচটিতেই! বৃহস্পতিবার বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সেমি-ফাইনালের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখল অস্ট্রেলিয়া। ৪ ম্যাচে তিন জয় তাদের।

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ টস ভাগ্যটাও সঙ্গে ছিল না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে যা করল দল, সেটা ভুলে যেতে পারলেই বরং ভালো। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের সামনে সোজা বাংলায়- লজ্জায় ডুবালেন টাইগাররা। দল মাত্র ৭৩ রানে অলআউট হলো। তারপর ৬ ওভার ২ বলে কেবল ২ উইকেট হারিয়ে হেসে-খেলে জয় তুলে নেয় অজিরা।

অথচ বাংলাদেশ কিনা দুবাইয়ে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল মিরপুরের স্মৃতি! যেখানে গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়া দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-১ এ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ঢাকা থেকে দুবাইয়ের বিমান পথ ৩,৫৪৫.৯৯ কিলোমিটার। এই বড় দূরত্বটা থাকল ক্রিকেট মাঠেও। দুবাইয়ের অনেকটা ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যেন ব্যাট করতে ভুলে গেলেন। উইকেটে আসা-যাওয়ার এই খেলাটা নিজেরা ফের দেখলে নিশ্চিতভাবেই লজ্জা পাবেন!

আরেকটু হলে তো টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন সংগ্রহের লজ্জায় পড়তে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। সেটা অবশ্য টপকালো। আগের সেই দুঃস্বপ্ন ৭০ রান এসেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। সেটি ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আত্মাহুতির গল্পটা প্রায় একইরকম। উইকেটে এলেন আর গেলেন! আসলে ঘরে ফেরার তাড়াটাও ছিল হয়তো। শুক্রবার সকালেই তো ফিরে যাওয়ার কথা বাংলাদেশে। তার আগে হোটেল রুমে দ্রুত গিয়ে ব্যাগ গোছাবেন বলেই কি খেলা শুরুর তিন ওভার না যেতেই দল হারাল তিন উইকেট!

ব্যর্থতার গল্প সমৃদ্ধ করে লিটন দাস ফিরলেন কোনো রান না করেই। সৌম্য সরকার ৫ আর মুশফিকুর রহিম ১ রান করে এটুকু অন্তত বুঝিয়ে দিলেন- ২০ ওভারের ক্রিকেটে তাদের দিনও বুঝি ফুরোল!

তাদের পতনের পর কিছুটা সময় লড়েছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষের আগেই এই ওপেনার ধরেন সাজঘরের পথ। তার আগে করতে পারেন ১৬ বলে ১৭ রান। এরপর আফিফ হোসেনও অস্থির হয়ে ওঠেন ফেরার জন্য। তাকে যেন সেই সুযোগটা করে দিলেন অ্য্ডাাম জাম্পা। অজি এই স্পিনারের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে কাটা পড়েন আফিফ, শূন্য রানে। টানা দুই ম্যাচে কোনো রান করা হলো না তার।

লড়তে চেয়েছিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। কিন্তু থিতু হয়েও শেষ রক্ষা হলো না তরুণ এই হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানের। সেই অ্যাডাম জ্যাম্পার বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেট কিপারের গ্লাভসে। ১৮ বলে ১৯ রানে শেষ শামীম। বাংলাদেশ দল তখন ১০ ওভার ৫ বলে ৬ উইকেটে ৬২।

তখন অন্তত মনে হচ্ছিল পুরো ২০ ওভারে খেলে আসবে দল। কিন্তু পতনের মিছিল তো আর থামে না! কিছুটা ফর্মে থাকা শেখ মেহেদি হাসান এবার আউট প্রথম বলেই। দল তখন মহা বিপর্যয়ে। কিছু একটা করতে পারতেন অধিনায়ক, কিন্তু হতাশার জন্ম দিয়ে তিনিও হতে পারলেন না ত্রাণকর্তা। তাকে ফেরালেন মিচেল স্টার্ক। গ্ল্যান্স করতে গিয়ে বল তুলে দেন কিপার ম্যাথু ওয়েডের হাতে। ১৮ বলে ১৬ রান তুলে আউট রিয়াদ। তখন দলের স্কোর ১২.২ ওভারে ৮ উইকেটে ৬৪।

এর পরের গল্প আর না-ই বলি, তাসকিন-মুস্তাফিজরা তো আর ব্যাট করতে দুবাই যাননি। বাংলাদেশ অলআউট হলো ৭৪ রানে। নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর!

অজি স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পাই সর্বনাশ যা করার করলেন বাংলাদেশের। ৪ ওভারে ১৯ রানে ৫ উইকেট নেন এই স্পিনার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার সেরা বোলিং ফিগার। আর লজ্জার ব্যাপার হলো ২০ ওভারের খেলায় ১৫ ওভারেই অলআউট বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে নিজেদের সবচেয়ে কম ওভার খেলার অনাকাংখিত রেকর্ডও এটি। আগের ম্যাচে ৮৪ রানে অলআউটের পর এবার ৭৪।

সংগ্রহটা ফুঁ দিয়েই উড়িয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। যে উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা খাবি খেলেন সেখানে দুই অজি ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার রান তুললেন অনায়াসে। বুঝিয়ে দিলেন, এই উইকেটে যোগ্যতা থাকলে খেলা যায়। একটা সাফল্য অবশ্য পেলেন তাসকিন আহমেদ। এই পেসার ফেরালেন ফিঞ্চকে। ২০ বলে ৪০ রান তুলে ততক্ষণে অজি অধিনায়ক দলকে নিয়ে যান জয়ের খুব কাছে।

এরপর ওয়ার্নারকে (১৪ বলে ১৮) শরিফুল ফেরালেও মিচেল মার্শ (৫ বলে ১৬) ম্যাচটা শেষ করে দেন কয়েকটা হিটেই।

এ-যাচ্ছেতাই ক্রিকেট আর দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ের স্মৃতি নিয়েই এবার ঘরে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। ২০ ওভারের বিশ্বকাপ লাল-সবুজের জন্য দুঃস্বপ্ন ছাড়া আবার কী? এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই ফরমেটের বিশ্বকাপে জয় মাত্র একটি। এবার ৫ ম্যাচে পাঁচটিতেই হার। আসছে বছর আরেকটি বিশ্বকাপ, জেগে উঠতে চাইলে পরের দিন সকাল থেকেই নতুন করে ভাবতে হবে ক্রিকেট কর্তাদের। সেই ভাবনার সময় কি তাদের হবে?

আরবিসি/০৪ নভেম্বর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category