• শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন

অপসাংবাদিকতা ঠেকাতে রাজশাহীতে পেশাদার সাংবাদিকদের অবরোধ

Reporter Name / ১০৫ Time View
Update : রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : কথিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এবার সোচ্চার হয়েছেন রাজশাহীর পেশাদার সাংবাদিকরা। তাদের গ্রেপ্তার আর এদের প্রশ্রয়দানকারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে সাংবাদিকরা সড়ক অবরোধ করেন।

রোববার বেলা ১১টায় নগরীর অন্যতম প্রধান ব্যস্ততম এলাকা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে রাস্তা অবরোধ করে সাংবাদিকরা অবস্থান নেন। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে তিনজনকে গ্রেপ্তার ও বোয়ালিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় সাংবাদিকরা।

ঘটনার সূত্রপাত সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব নামের একটি ভুঁইফোড় প্রেসক্লাবের ব্যানারে কয়েকজন কথিত সাংবাদিক মানববন্ধন করতে যান শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে। সম্প্রতি কয়েকজন কথিত সাংবাদিক এই প্রেসক্লাব গঠনের ঘোষণা দেন। এরা রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সচিব ও আঞ্চলিক শিক্ষা ভবনের পরিচালক এবং সহকারী পরিচালকের অপসারণের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন।

এসব কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি চাঁদা চাইতে এসেছিলেন। তা না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করা হচ্ছে। মানববন্ধন করা কোন সাংবাদিকদের কাজ নয় জানিয়ে তারা রাজশাহীর পেশাদার সাংবাদিকদের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কারা মানববন্ধন করছেন তা দেখতে ঘটনাস্থলে যান রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন সাংবাদিক। রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকতার নামে এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য আয়োজকদের বলেন। আর তখনই পুলিশের সামনেই রফিকুল ইসলামের ওপর চড়াও হন কথিত সাংবাদিকেরা। তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে দৈনিক সানশাইননের স্টাফ রিপোর্টার রাজু আহমেদকেও লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় তারা সাংবাদিক রাজুকে কিল-ঘুষি মারে এবং একজন গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, বেশকিছু কথিত সাংবাদিক তাদের ওপর হামলা চালান। এ সময় তারা পুলিশের সহযোগিতা চাইলে উল্ট তাদের সঙ্গে অশালিন আচরণ করেন বোয়ালিয়া থানান ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন।

এদিকে, দুই সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে বেলা ১১টায় কামারুজ্জামান চত্বরে রাস্তায় বসে পড়েন ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। সাংবাদিকেরা হামলাকারী কথিত সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মনের প্রত্যাহারের দাবিতে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। দুপুরের দিকে পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ রায় দেবু সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়ে নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সঙ্গে বসার অনুরোধ জানান।

তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, আনোয়ার আলী হিমু, স. ম. সাজু, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী পরিষদের সদস্য বদরুল হাসান লিটন, রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান জনিসহ সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পুলিশ কমিশনার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তাৎক্ষণিক কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় সাংবাদিকরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।

এদিকে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনারের কাছে গেলেও অন্য সাংবাদিকরা সড়ক অবরোধ করেই ছিলেন। প্রতিনিধিদল ফিরে আসার পরও ওই আন্দোলন চলছিল। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, হামলাকারী ফারুক, লিয়াকত আর রেজাউলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও তিন দিনের মধ্যে ওসি নিবারনকে প্রত্যাহার করার আশ্বাস দেন। এরপর সাংবাদিকরা অবরোধ তুলে নেওয়া ঘোষণা দেয়।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক বলেন, হামলাকারী অন্যরাও গ্রেপ্তার হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আর পুলিশ কমিশনার বোয়ালিয়ার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মনকে প্রত্যাহার করতে তিন দিন সময় চেয়েছেন। আমরা ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে ওসি প্রত্যাহার না হলে বুধবার দুপুর ১২টায় বোয়ালিয়া থানা ঘেরাও করা হবে।

আরবিসি/৩১ অক্টোবর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category