স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগরীতে স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক দাবি ও নারী নির্যাতন মামলার আসামী স্বামী রায়হান ইসলাম রমি নামের এক প্রকৌশলীকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালতের বিচারক। গত সোমবার দুপুরে রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল (০১) এর বিচারক মোঃ আবুল মুনসুর মিঞা মামলার শুনানী শেষে ওই প্রকৌশলীকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আর মামলার বাকি ৩ আসামীর জামিন মঞ্জুর করেন।
আসামী রায়হান ইসলাম রমি নগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকার মৃত তফিজ উদ্দীন আহমেদের ছেলে। বর্তমানে তিনি বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত আছেন।
আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১২ সালে ৫ লক্ষ টাকা দেন মোহরানা উল্লেখ করে মামলার বাদী’র সাথে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রায়হান ইসলাম রমি নামের এক ব্যাক্তি’র বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই প্রকৌশলী স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা ১৫ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য বাদিনীকে মানসিক ও শারিরীক ভাবে নির্যাতন করে আসছিলো। প্রকৌশলী স্বামী চাকুরীর সুবাদে বেশির ভাগ সময় দূর্গাপুর উপজেলায় বসবাস করতেন।
বাদীনি এক সন্তান নিয়ে নগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকায় স্বামীর বাসায় বসবাস করতেন। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার শশুড় বাড়ীর লোকজনরা বাদীনিকে প্রায়ই নির্যাতন করতো। শশুড় বাড়ীর লোকজনের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাদীনি তার সন্তানকে নিয়ে প্রায় পিতার বাড়ীতে অবস্থান করতেন। বিয়ের সময় বাদিনীর পিতা বাদিকে ১০ ভরি স্বর্ণের গহনা প্রদান করেছিলেন। পরবর্তীতে আসামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা স্বর্ণের গহনাগুলো আত্মসাৎ করেন।
মামলায় ১০ ভরি স্বর্ণের গহণা’র মূল্যে ৫ লক্ষ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় বাদিনীর বিয়ের আগে তার নামে একটি ডিপিএস ছিলো। বিয়ের পর মেয়াদ উত্তীর্ণ ডিপিএস এর মোট ১২ লক্ষ টাকা আসামীর বাড়ি সংস্কারের বাহানায় আসামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা আত্মসাৎ করে। তার পরেও আসামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা জমি কেনার কথা বলে বাদিনীকে তার পিতার বাড়ি হতে ১৫ লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়ে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। বাদিনী ওই টাকা নিয়ে আসতে অস্বীকার করলে আসামীসহ তার পরিবারের লোকজন বাদিনীর উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে বাদিনী অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। বাদিনী সুস্থ হয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি আমলে না নিয়ে মিমাংসা করে দিবেন বলে জানান। পরে কোন পথ না দেখে বাদিনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল (০১) আদালতে যৌতুক দাবি ও নারী নির্যাতন দমন আইনে প্রকৌশলী স্বামী রমিসহ তার পরিবারের বাকি সদস্যদের নামে মামলা দায়ের করেন। পরে দায়েরকৃত ওই মামলায় প্রকৌশলী স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা আদালতে জামিনের প্রার্থণা করলে আদালতের বিচারক প্রকৌশলী স্বামী রায়হান ইসলাম রমিকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আর মামলার বাকি আসামীদের জামিনে মুক্তি প্রদানের আদেশ দেন।
আরবিসি/২৭ অক্টোবর/ রোজি