আরবিসি ডেস্ক : অতীতকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতের পানে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। তবে কোনও কোনও অতীত থেকে অনুপ্রেরণাও খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের অতীত এতটাই ‘অন্ধকারময়’ সেই অতীত আকঁড়ে থাকতে চাইবেন না কেউই। তাই তো মাহমুদউল্লাহ দেশ ছাড়ার আগে জানিয়ে গেছেন, বিশ্বকাপের অতীত ভুলিয়ে দিয়ে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে সাফল্যের ভেলায় ভাসাবেন। সেই পথে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। আজ (রবিবার) বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ওমানের আল আমিরাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে বিটিভি, গাজী টিভি ও টি স্পোর্টসে।
বিশ্বকাপ মিশন শুরুর পথে মরুর বুকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বড় হোঁচটই খেয়েছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে স্লো ও টার্নিং উইকেটে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে পরাভূত করে আত্মবিশ্বাস টইটুম্বর হলেও বিশ্বকাপের মঞ্চে নামার আগে কিছুটা হলেও সেখানে চিড় ধরেছে। স্পোর্টিং উইকেটে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের কাছে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচের হার বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ‘ফাঁক’ থেকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখিয়েছে। অবশ্য এটাও ঠিক প্রস্তুতি ম্যাচে জয়-পরাজয় মূখ্য নয়। তাই দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসে নতুন এক বাংলাদেশকে পাওয়ার আশা।
তাছাড়া ৬ বছর আগের এক অতীত থেকে চাইলে উজ্জীবিত হতে পারে বাংলাদেশ। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ময়দানী লড়াইয়ের আগে আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে ভয়ঙ্কর চাপ নিতে হয়েছিল মাশরাফি মুর্তজাদের। এবারও সেই আইরিশদের কাছে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে হেরে একই রকম চাপে মাহমুদউল্লাহরা। এই হারের পর গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৫ সালেও তেমন সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। অথচ ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের মতো দলকে বিদায় করে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। এবারও সেটির পুনরাবৃত্তির আশা। যে অতীত রোমাঞ্চকর, সেই অতীত থেকে প্রেরণা নেওয়াই যায়!
যদিও স্কটিশদের সঙ্গে অতীত পরিসংখ্যান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়ে আছে। ২০১২ সালের বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি জিতেছিল স্কটল্যান্ড। সেবার আয়ারল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস সফরে গিয়েছিল মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে। আয়ারল্যান্ডে খেলে নেদারল্যান্ডস পৌঁছে স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ওই ম্যাচটি ৩৪ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের ৭ উইকেটে করা ১৬২ রানের জবাবে ১৮ ওভারে ১২৮ রানে গুটিয়ে যায় মুশফিকুর রহিমের দল। আজ মাঠে নামার আগে পুরনো এই অতীত ‘পিষে’ ফেলার সুযোগ বাংলাদেশ দলের।
বিশ্বকাপের অতীত তো পরের ব্যাপার, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের অতীত মুছে ফেলার কাজটাও হয়তো সহজ হবে না। প্রস্তুতি ম্যাচে দলের পারফরম্যান্সে সেই আশঙ্কাই ফুটে উঠছে। দুটি ওয়ার্ম-আপ ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে লিটন-মুশফিকরা। যে আয়ারল্যান্ডের কাছে হার মেনেছে বাংলাদেশ, সেই আয়ারল্যান্ডকে সহজেই হারিয়েছে স্কটল্যান্ড। ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে চোখ রাঙানিও দিয়ে রেখেছেন স্কটিশ কোচ শেন বার্জার, ‘প্রথম রাউন্ডের ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশকে আমরা পিএনজি বা ওমানের চেয়ে ওপরে কোথাও দেখি না। আমরা জানি, সব দলই আমাদের বিপক্ষে জিততে তেড়ে আসবে। তবে আমরা তাদের সবার জন্যই সবচেয়ে বড় ম্যাচ হবো। আমরা জানি, আমাদের সামর্থ্য আছে। যদি নিজেদের সেরাটা দিতে পারি, যেকোনও দলকে হারাতে পারি আমরা।’
স্কটিশ কোচের হুমকিতে অবশ্য কিছু যায়-আসে না বাংলাদেশ দলের। অন্তত মাহমুদউল্লাহর কথাতে তেমনটাই বোঝা গেলো, ‘উনি কী বলেছেন, এটা নিয়ে আমি বদার্ড নই। আমরা আমাদের সামর্থ্য সম্পর্কে জানি। আশা করি, দল হিসেবে আমরা সেরাটাই মাঠে দেবো।’
ম্যাচ শুরুর আগে দুই দলের কথার লড়াই চলছে। যদিও ফল পেতে মাঠের লড়াইয়ের কোনও বিকল্প নেই। সঠিকভাবে পরিকল্পনাগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমের ফল নিজেদের পক্ষে আনা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে সেটি বেশ দূরের পথ বলেই মনে হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি ব্যাটারদের খেলা, অথচ দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটাররা রান খরায়। মিরপুরের স্লো উইকেটের দোহাই দিয়ে না হয় বাঁচা গেছে, কিন্তু ওমান-আরব আমিরাতের স্পোর্টিং উইকেটে এক সৌম্য ছাড়া কেউই রান পাননি!
তাতে অবশ্য চিন্তিত নয় বাংলাদেশ। ওয়ার্ম-আপ ম্যাচের ফল কিংবা পারফরম্যান্সে না তাকিয়ে বিশ্বকাপের লড়াইয়েই মাহমুদউল্লাহদের সব মনোযোগ। যেখানে না আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অতীতের হিসাব, না থাকছে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যাওয়ার স্মৃতি। থাকছে শুধু জয় দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছাশক্তি!
আরবিসি/১৭ অক্টোবর/ রোজি