স্টাফ রিপোর্টার : সরকারের সেবাসমূহ সঠিক ভাবে জনগণের দারপ্রান্তে পৌছাতে জনবল বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার সমিতির রাজশাহী বিভাগের আঞ্চলিক সম্মেলনে বক্তারা এ দাবি জানান।
তারা বলেন, মানবিক সহায়তার বরাদ্দ প্রাপ্তি থেকে শুরু করে উপ-বরাদ্দ জারি, তালিকা প্রনয়ণ, বিতরণ, তদারকি কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত সবই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন একজন অফিসারকেই করতে হয়। তবে জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় তাদের দিনরাত প্ররিশ্রম করেও নানা চাপের মুখে থাকতে হয়।
শনিবার রাজশাহীর একটি অভিযাত হোটেলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায় কর্মকর্তা একেএম শাহ আলম মোল্লা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ও ডিআরআরও সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী আমিনুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইডিইবি রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, পিআইও সমিতির উপদেষ্টা ও নাটোর ডিআরআরও সালাইদ্দিন আল ওয়াদুদ, নওগাঁ ডিআরআরও কামরুল ইসলাম, পিআইও সমিতির সভাপতি আখতারুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি মুবিনুর রহমান, আব্দুল্লাহহিল কাফি, বদরুদ্দোজা, মুসফিকুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গোদাগাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবু বাশির।
তারা বলেন, দুর্যোগকালীন কার্যক্রমকে স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করতে এবং সকল ধরণের দুর্যোগ মোকাবেলায় দক্ষ ও কার্যকর কাঠামো গড়ে তুলতে ২০১২ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন অনুমোদন হয়। এ আইনের ক্ষমতাবলে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১৫ প্রনয়ণ করা হয়েছে। এ নীতিমালার মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন এবং সম্পৃক্ত সকল স্টেকহোল্ডারদের জবাবদিহিতা করার লক্ষে তা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইনের দৃষ্টিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন এবং নীতিমালা দুটি-ই যথেষ্ট সমৃদ্ধ। কিন্তু পূর্ণ বাস্তবায়নের অভাবে এবং জনবল সংকটের কারণে অধিদপ্তরের বর্তমান কার্যকাঠামো খুবই দুর্বল ও পরনির্ভরশীল। ফলে বিভিন্ন রকম অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে উঠে আসে বারবার।
বক্তারা জানান, করোনা মহামারীতে সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাদের তদারকিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক সহযোগিতায় ঝুঁকি নিয়ে সরকারের সহায়তা জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কঠিন দায়িত্ব পালন করছেন তার। এটা শুধু সরকারের অর্পিত দায়িত্ব পালনই নয় বরং মানবিক মূল্যবোধও বটে। পাশাপাশি সরকারি সহায়তার জন্য ভুক্তভোগীদের তালিকা তৈরির ব্যাপারটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ। তখন একদিকে জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের চাপ থাকে অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও সমন্নয় করতে হয়। এসময় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় পিআইওকে। উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মানতে গিয়ে অনেক সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়।
তারা বলেন মানবিক সহায়তার বরাদ্দ প্রাপ্তি থেকে শুরু করে উপ-বরাদ্দ জারি, তালিকা প্রনয়ণ, বিতরণ, তদারকি কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত করা, তালিকা অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে বিতরণে সার্বিক কাজ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন একজন অফিসারকেই করতে হয়। এ সকল কার্যক্রম যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে বাস্তবায়ন হয় এজন্য উপজেলা থেকে প্রতিদিনের কার্যক্রমের রির্পোট জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়। লোকবল না থাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা কখনো গভীর রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করতে হয়। অফিস থেকে বাসায় ফিরেও মোবাইলে উর্ধতন কর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় করতে হয়। দুর্যোগ মুহুর্তে পরিবার পরিজনের কথা ভুলে জনগণের সেবায় দিনরাত অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়।
উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে যতো ধরণের জনবান্ধন ও উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন হয় তার সিংহভাগই পিআইও অফিসের মাধ্যমে। অথচ এ অফিসের জনবল মাত্র দুজন। কোন ক্ষেত্রে প্রকল্পের আর দুতিন জন অতিথি স্টাফ দেখা যায়। মাত্র দুজন মানুষ নিয়ে এতোগুলা দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পালন আশা করা খুব কস্টসাধ্য বলে মনে করেন তারা।
বক্তারা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর নেই। কম্পিউটার কম্পোজসহ অন্যান্য কাজের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সাহায্য নিতে হয়। প্রকল্পের জনবল নিয়ে কাজ করতে হয়।
তারা বলেন, বিশ্বময় ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের জনবান্ধনমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নে জনবল বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরী।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম ও জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী নূর-এ- সেফা।
আরবিসি/১৬ অক্টোবর/ রোজি