আরবিসি ডেস্ক : মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে এখন তদন্ত করছে পিবিআই। এই তদন্ত করতে গিয়ে একের পর এক বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যা এবং ধর্ষণের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে গুলশানের ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করেছে, রেজিস্টার বুক জব্দ করেছে এবং ওই সমস্ত সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, মুনিয়ার মৃত্যুর ২ ঘণ্টা আগে ওই ফ্ল্যাটে তিনজন ব্যক্তি প্রবেশ করেছিল। সিসিটিভি ফুটেজে তাদের ছবি পাওয়া গেছে। কিন্তু তিনজন এক সময় প্রবেশ করেনি। তাদের প্রথমজন প্রবেশের ৪৫ মিনিট পর দ্বিতীয়জন এবং তার ১৫ মিনিট পর তৃতীয়জন প্রবেশ করেছেন।
এর আগে, নুসরাতের সাথে মুনিয়ার টেলিফোনে আলাপের রেকর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সেখানে নুসরাত বলছে, ওদেরকে পাঠাচ্ছি, ওদেরকে বসার ব্যবস্থা কর আমি আসছি। এরা কারা? এই সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে পরবর্তীতে নুসরাত যখন থানায় গেলেন সেই গুলশান থানার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যে তিনজন সেদিন মুনিয়ার মৃত্যুর আগে গুলশানের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল সেই তিনজনই আবার নুসরাতের সঙ্গে গাড়িতে করে গুলশান থানায় যান এবং গুলশান থানায় যখন নুসরাত মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে মামলা দায়ের করেন- সে সময় তাদেরকে নুসরাতের পাশে দেখা গেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, নুসরাত কুমিল্লা থেকে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আসার পরপরই এই তিনজন কোথা থেকে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে এলো। তদন্তে আরও দেখা গেছে, নুসরাতের কাছে মুনিয়ার ফ্ল্যাটের একটি চাবির ডুপ্লিকেট চাবি থাকত এবং এই চাবিটি তিনি এই তিনজন সহযোগীকে দিয়েছিলেন বলেও প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। আবার যখন নুসরাত আদালতে নারাজি দরখাস্ত করেন তখনও ওই তিনজন ব্যক্তিকে নুসরাতের সঙ্গে দেখা যায়, তারা কোর্টে ঘোরাঘুরি করছেন। এরপর যখন নুসরাত ৮ নম্বর নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন তখনও এই তিনজনকে পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই তিনজন নুসরাতের একান্ত ব্যক্তিগত সহযোগী এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তি। এরা কুমিল্লাতেও নুসরাতের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে কাজ করেন। নুসরাতের পারিবারিক ঝামেলার জন্য তাকে কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পালতে হতো বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন। বিশেষ করে তার ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ সহিংসতা পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং এ নিয়ে মামলা মোকদ্দমা আছে। এ কারণেই নুসরাত স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপদের সঙ্গে উঠাবসা শুরু করেন এবং তাদেরকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিতেন। একইসঙ্গে মুনিয়া যেন অবাধ্য না হয়ে যায় এবং তার নাগালের বাইরে না চলে যায় এজন্য মুনিয়াকে নজরদারির মধ্যে রাখার জন্য এরকম কয়েকজনকে ব্যবহার করা হতো। এরা প্রত্যেকেই পেশাদার সন্ত্রাসী এবং এদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ এখন এই তিনজনকে খুঁজছে। এই তিনজনকে অন্তত সাতটি জায়গায় নুসরাতের সঙ্গে দেখা গেছে এবং এই ভিডিওগুলো একটার পর একটা মিলিয়ে মুনিয়ার মৃত্যুর সঙ্গে এদের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ মুনিয়া যদি সত্যি সত্যি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তাহলে সেই হত্যাকাণ্ডের সময় ওই ফ্ল্যাটে কাউকে থাকতে হবে।
এখন সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, তিনজন ব্যক্তি সেদিন ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। সেই তিনজনই আবার নুসরাতের সঙ্গে সার্বক্ষণিক ভাবে ছায়ার মত ঘোরাফেরা করছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে এই মামলার তদন্তে একটি নাটকীয় মোড় নিয়েছে। বিভিন্ন মহল মনে করছেন, নুসরাতের বিশ্বস্ত সহযোগী এই তিনজনকে গ্রেফতার করতে পারলেই এই মামলার রহস্যজট অনেকখানি খুলে যাবে। তবে তদন্তে এটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছে যে, মুনিয়ার মৃত্যুর দিন যাদেরকে আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের কেউই মুনিয়ার ফ্ল্যাটে যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজের তাদের ফ্ল্যাটে যাওয়ার কোনো প্রমাণ মেলেনি। বরং যে তিনজন রহস্যজনকভাবে ভুল ঠিকানায় ফ্ল্যাটে গিয়েছিল সেই তিনজনকে নিয়েই এখন তদন্ত ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আরবিসি/০৩ অক্টোবর/ রোজি