স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যামিক শিক্ষাবোর্ডে কর্মকর্তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে শিক্ষা বোর্ডের সচিব মোয়াজ্জেম হোসেনের স্বেচ্চাচারি মনোভাবের কারণে নানা বিশৃঙ্খল ঘটনাও ঘটছে। খোদ চেয়ারম্যানের নির্দেশনাও তিনি মানেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বোর্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজও আটকে আছে। এ নিয়ে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে অসন্তোস বাড়ছে।
বোর্ড সূত্র জানায়, ড. মোয়াজ্জেম হোসেন সচিব হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই নানারকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই চলেছে শিক্ষা বোর্ডে। এক বছর আগে এসব কারণে একবার শোকজডও হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের মামলার ফাইল ছাড়াও অন্যান্য শৃঙ্খলাজনিত নথি অকারণেই আটকে রাখেন।
বোর্ড চেয়ারম্যান কর্তৃক হাইকোর্টে আইনি সহায়তা পাবার জন্য আরো একজন উকিল নিয়োগের সিদ্ধান্ত দাফরিকভাবে গৃহীত হলেও সচিব সেই ফাইলটিও আটকে দেন নিজের ক্ষমতা বলে। সম্প্রতি শিক্ষা বোর্ডের অভ্যন্তরিন নাম ও বয়স সংশোধনের গুরুত্তপূর্ণ একটি ফাইলও তিনি আটকে রাখেন। শিক্ষা বোর্ডের রুলস এন্ড রেগুলেশন অনুযায়ী ‘শিক্ষা বোর্ডের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের দিক নির্দেশনা মোতাবেক সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাকে সকল কাজ করতে হবে’ বলে নির্দেশনা থাকলেও এসবের কিছুই তোয়াক্কা করেন না তিনি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বোর্ড চেয়ারম্যান নিজেও।
সম্প্রতি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে নয়জন কর্মকর্তার বেতন স্কেল নির্ধারণ বিবরণী ও গোপনীয় কাগজপত্র চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়ায় ফটোকপি করার প্রতিবাদ করায় দুই কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। প্রায় একঘন্টা একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে। গত ১২ সেপ্টেম্বর বিকেলের এ ঘটনায় বোর্ডজুড়ে চরম অসন্তোস বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে লাঞ্ছনার শিকার দুই কর্মকর্তা বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে। লাঞ্ছনার ভিডিও ফুটেজও ফাস হয়েছে। সেখানে দেখা যায় বোর্ড সচিবের সঙ্গে উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিকচন্দ্র সেন বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পড়েই সচিব সদৌড়ে গিয়ে বাইরে দায়িত্ব থাকা একজন আনসার সদস্যকে ভেতরে আসতে বলে নিজ কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেন। ওই দুই কর্মকর্তা বাইরে বের হতে চাইলে আনসার সদস্য ও সচিব মিলে তাদেরকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। দুই কর্মকর্তাকে সচিবের রুমে আটকে রাখা হয়। বিষয়টি এখন তদন্তাধিন আছে বলে জানান শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান।
অভিযোগ উঠেছে এর আগেও সচিবের দফতর থেকে বিভিন্ন বেতন শিট টেম্বারিং করে নোটশিটের কপিসহ বিভিন্ন গোপনীয় নথি বাইরে সরবরাহ করা হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, সচিব নিজেই দু’জন কর্মকর্তাকে নিজের কক্ষে অবরুদ্ধ করে বেআইনী কাজ করেছন।
বোর্ডের উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, বারবার অনুরোধ করা হলেও সেদিন তাদের বাইরে যেতে দেওয়া হয় নি। তিনি বরেন, ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভাগীয়ভাবে হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার ডিডি বাদশা হোসেন, উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিকচন্দ্র সেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষাবোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সচিব শিক্ষাবোর্ডে চরম স্বেচ্চাচারিতামুলক আচরণ করেন। তার আচরণে বোর্ডের ভামুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। ফাইলপত্র দিনের পর দিন অঅটকে রাখায় উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও বোর্ড সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন মোবাইল রিসিভ করেন নি। তবে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোকবুল হোসেন বলেন, সম্প্রতিক শিক্ষাবোর্ডের সব ঘটনার পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরবিসি/০১ অক্টোবর/ রোজি