আরবিসি ডেস্ক : এ বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দেশে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনায়, এ নয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনে, ক্রসফায়ার, গুলিবিনিময় বা কথিত বন্দুকযুদ্ধে অনেক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। এসময় গুলিতে এক সাংবাদিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৫৪ সাংবাদিক।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ ও নিজেদের সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এতে একাধিক ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে গত ৩ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় পুলিশের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় মো. লিটন (৪০) নামের এক ট্রাকচালকের মৃত্যু হয়। পুলিশ লিটনের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করলেও পরিবারের সদস্যসহ ট্রাক শ্রমিকদের পক্ষ থেকে থানা হেফাজতে নির্যাতনের কারণে লিটনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
আসকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুমের ঘটনার পাশাপাশি ‘নিখোঁজ’র ঘটনাও ঘটছে। মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্র রিজওয়ান হাসান রাকিন তার স্ত্রীর বড় ভাই মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে গত ৪ আগস্ট সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন।
রিজওয়ানের নানা সেলিম সারোয়ার আসক প্রতিনিধিদের জানান, প্লেন থেকে নামার পর মাহফুজ ফোনে তাকে পৌঁছানোর খবর জানান। এরপর তিনি বিমানবন্দর এলাকায় তাদের কোনো খোঁজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। ওই দিন (৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় মাহফুজকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় নামিয়ে দেয় অজ্ঞাতপরিচয় অপহরণকারীরা।
বাসায় ফিরে মাহফুজ পরিবারের লোকদের জানান, বিমানবন্দরের ভেতরে অভিবাসন ডেস্ক পার হওয়ার পর তাদের দুজনকেই (সঙ্গে থাকা রিজওয়ানসহ) চোখ বেঁধে গাড়িতে তোলা হয়। এরপর অপরিচিত জায়গায় নিয়ে তাদের পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিজওয়ানের রাজনৈতিক পরিচয় এবং কোনো অপরাধকর্মে জড়িত কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা রিজওয়ানের এখনো কোনো সন্ধান পাননি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলো ক্রমবর্ধমান হারে ঘটেই চলছে। এছাড়া মতপ্রকাশের অধিকার হরণ ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে গণমাধ্যমকর্মীসহ ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলার অনেক ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশেষত দুর্গাপূজা সামনে রেখে প্রতিবারের মতো এবারও হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে।
আসকের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে সংগ্রামরত আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাকে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।
আরবিসি/০২ অক্টোবর/ রোজি