আরবিসি ডেস্ক : রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নতুন নির্বচন কমিশন (ইসি) গঠনের চিন্তা করছে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিষয়টির জন্য আইন প্রণয়নের কথা উঠলেও এ বিষয়ে সরকারের কোনো তৎপরতা নেই বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চারজন কমিশনার নিযোগ দেওয়া হয়। বর্তমান সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে। এর মধ্যেই নতুন সিইসি ও চার কমিশনারের নিয়োগের মাধ্যমে নতুন ইসি গঠনের বিষয়টি রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে এসেছে।
সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের কথা বলা থাকলেও এ সংক্রান্ত আইন এখন প্রণয়ন হয়নি। পরবর্তী ইসি গঠনের এ আইন করা হবে কি না, সে বিষয়টিও আলোচনা উঠে আসছে। কোনো কোনো দল থেকে আইন তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে।
তবে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, এবারও ইসি গঠনে আইন করার সম্ভাবনা নেই। রাষ্ট্রপতির গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমেই পরবর্তী নির্বাচন কমিশন হতে যাচ্ছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেই ক্ষমতার বলেই তিনি সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করেন। পরবর্তী ইসিও সেভাবেই গঠিত হবে।
এদিকে, ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলে আসছে বিএনপি। তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন গঠনের আইন প্রণয়নের কথা বলেছে। আইনের মাধ্যমে ইসি গঠন হলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে বলে তারা মনে করেন।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির মাধ্যমেই ইসি গঠনের কথা স্পষ্টভাবেই পুণরায় ব্যক্ত করেছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব বিএনপি মানছে না। অথচ সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাহলে বিএনপি ‘পাগল ও শিশু’ দিয়ে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করুন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন করে গঠন করা হবে। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করে থাকেন। তারপরও এ বিষয় নিয়ে কারও কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা সংসদে বলতে পারেন। যেহেতু সব দলই সংসদে রয়েছে। যদিও সংসদে আলোচনা করার বাধ্যবাধকতা নেই। তারপরও যেহেতু সংসদ আছে, তাই সবাই মতামত দিতে পারেন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এই নির্বাচন কমিশনের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেবে। তার আগেই ইসি গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সংবিধানের ১১৮(১) ধারা অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে ইসি গঠিত হয়। এখানে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগের কথা বলা আছে।
বর্তমান ইসিসহ এর আগের ইসি অর্থাৎ পরপর দুটি ইসি গঠিত হয় রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির মাধ্যমে। এবারও সেই প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য এর আগে কোনো দলই আইনের কথা ভাবেনি, আইন করেনি। দীর্ঘ দিন এভাবেই চলে আসছে। এখন আইনের কথা বলা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে দুটি নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে যেভাবে গঠন করেছেন, এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে সেভাবেই হবে। আইনের বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে।
আরবিসি/০২ অক্টোবর/ রোজি