আরবিসি ডেস্ক : ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। ইমান গ্রহণের পর ইসলামে নামাজের গুরুত্ব সর্বাপেক্ষা বেশি। মুসলমান হিসেবে নামাজই আমাদের প্রতিদিনের ফরজ দায়িত্ব। বান্দা ও প্রভুর মধ্যে নির্জন সেতুবন্ধের শ্রেষ্ঠতম উপায়। পরকালে আমাদের প্রতিটি আমলের হিসাব দিতে হবে মহান আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞাসার শীর্ষ তালিকায় থাকবে নামাজ সম্পর্কীয় মোকদ্দমা। আবু দাউদ।
সেই নামাজ আদায়কারীর সংখ্যা এ বিশ্বে আজ কত? আর আমরা যারা নামাজ আদায় করি তাদের কত জনের নামাজ হচ্ছে সহিভাবে, রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত তরিকা মতে? এর জন্য শুধু আমাদের অজানাই দায়ী নয়। রয়েছে যথেষ্ট অবহেলা। আল কোরআনের ভাষায় নামাজে অবহেলা মুনাফিকের অন্যতম নিদর্শন। সুরা নিসা, আয়াত ১৪২।
নিয়মিত নামাজ না পড়া এবং নামাজে যথাযথভাবে মনোযোগ না দেওয়া, নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ না করা ইত্যাদি আমাদের অবহেলারই প্রতিফল। আমরা কি মুনাফিক? না, আমরা সত্যিকার মুসলমান। তাহলে সঠিকভাবে নামাজ আদায়ে আমাদের কেন অবহেলা হবে? এ বিষয়ে জানা ও মানার ক্ষেত্রে আমাদের কেন উদাসীনতা থাকবে?
মহানবী (সা.) অসংখ্য সহি হাদিসে সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। যথাযথভাবে নামাজ আদায় না করে শুধু দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নামাজ পরিপূর্ণ হয় না। বরং সামান্য ত্রুটি বা অবহেলার কারণে নামাজ হয় অশুদ্ধ ও মূল্যহীন। এমন স্পষ্ট বর্ণনা বিভিন্ন হাদিসে এসেছে।
জনৈক সাহাবি মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করেন। এরপর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে তাঁকে সালাম করেন। রসুলুল্লাহ (সা.) সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ‘তুমি পুনরায় গিয়ে নামাজ আদায় কর, তুমি নামাজ আদায় করনি।’ ওই সাহাবি আবার নামাজ আদায় করে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে তাঁকে সালাম করেন। রসুলুল্লাহ (সা.) সালামের উত্তর দিয়ে তাকে বলেন, ‘তুমি পুনরায় গিয়ে নামাজ আদায় কর, তুমি নামাজ আদায় করনি।’
এভাবে ওই লোকটিকে রসুলুল্লাহ (সা.) তিনবার একই ধরনের নির্দেশ দেন। এরপর লোকটি বলেন, আপনাকে যিনি সত্যের বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ করে বলছি, আমি এর চেয়ে উত্তমরূপে নামাজ আদায় করতে পারি না, আমাকে তা শিখিয়ে দিন। রসুলুল্লাহ (সা.) তখন তাকে বললেন, ‘তুমি যখন নামাজে দাঁড়াও তাকবির বল, সাধ্যমতো কিরাত পড়। এরপর শান্তভাবে রুকু কর। তারপর শান্তভাবে উঠে দাঁড়াও। এরপর শান্তভাবে সিজদা কর। তারপর শান্তভাবে উঠে বস। এরপর শান্তভাবে সিজদা কর। এভাবে পূর্ণ নামাজ আদায় কর।’ বুখারি।
নামাজ শুদ্ধভাবে আদায় হওয়ার দুটি পদ্ধতি। নামাজের যাবতীয় ফরজ, ওয়াজিব ও নিয়ম যথাযথভাবে সময়মতো আদায় হলে নামাজের বাহ্যিক রূপ সঠিকভাবে হয়েছে বলে গণ্য করা যায়। আর আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর কাছে নামাজ শুদ্ধভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য নামাজ মনোযোগসহকারে এবং বিনয়-নম্র অবস্থায় আদায় করতে হবে।
মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মোমিনরা যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র।’ সুরা মোমিন, আয়াত ১-২।
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘সমস্ত নামাজের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের ব্যাপারে। আর আল্লাহর উদ্দেশে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াও।’ সুরা বাকারা, আয়াত ২৩৮।
বিচারপতি আল্লামা তাকি উসমানি কতই না সুন্দর লিখেছেন, নবী (সা.)-এর সুন্নাত মোতাবেক নামাজ আদায় করা ও এর ব্যতিক্রমভাবে আদায় করাতে সময়ের তেমন ব্যবধান হয় না, পরিশ্রম বেশি হয় না। হয় না টাকাপয়সা বা অন্য কোনো সামগ্রীর প্রয়োজন। তবে প্রয়োজন শুধু জানা। আর অবহেলা ও উদাসীনতাকে চিরতরে বিলীন করে দেওয়া। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শে উজ্জীবিত হওয়ার আগ্রহ সৃষ্টির প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রভুকে সন্তুষ্ট করার প্রেরণায় সুদৃঢ়চিত্তে ইবাদতে মগ্ন হওয়া।
লেখক : গবেষক ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।
আরবিসি/০১ অক্টোবর/ রোজি