স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে সর্বনিম্ন একজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দিনগত রাতে তার মৃত্যু হয়। তবে তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এটি তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মৃত্যু। এর আগের দিনও এই করোনা ইউনিটে আট জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এছাড়া রাজশাহী জেলায় তুলনামূলকভাবে করোনা সংক্রমণের হারও কমে এসেছে। বর্তমানে রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের হার ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত নারীর বাড়ি নওগাঁয়। তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তির পর করোনা নমুনা সংগ্রহের আগেই তার মৃত্যু হয়।
চলতি মাসে এ নিয়ে মোট ১৩৯ জনের মৃত্যু হলো। এর আগে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আগস্টে ৩৬৪ জন, জুলাইয়ে ৫৩১ জন এবং জুনে ৪০৫ জন মারা গেছেন।
এদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যখন নিম্নমুখী করোনা সংক্রমন তখন সাধারণ রোগির সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জরুরি বিভাগ সবখানেই সাধারণ রোগির ভিড় দেখা যাচ্ছে।
বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার ও ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে থাকছে দীর্ঘ লাইন। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও ভিড় দেখা যাচ্ছে। যেখানে অপেক্ষার প্রহরগুনতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষকে। আর স্বল্প জায়গায় বাড়তি রোগির পদচারণায় নিশ্চিত হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের তথ্য বলছে, করোনার মধ্যে সাধারণ রোগির তেমন চাপ ছিলো না। এখন প্রচুর রোগি সমাগম হচ্ছে। হাসপাতালের বর্হিবিভাগে এখন গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার ও জরুরি বিভাগে সাড়ে ৪০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাকালে একধরনের আতংঙ্ক ছিলো। যার কারণে একান্ত জরুরি না হলে মানুষ হাসপাতালমুখি হয় নি। কিন্তু তারা এখন হাসপাতালে আসছেন। একারণে সে সময় সাধারণ রোগির চাপ কম ছিলো। যেটা মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বাড়ছে।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. আফরোজা নাজনীন জানান, করোনা মহামারীর মধ্যে অনেক রোগির এমন হয়েছে যে তার আরও দুই-তিন মাস পর অপারেশন করলে চলবে। আবার বার্ন ইউনিট যেহেতু করোনা ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই জটিল অপারেশনগুলোও করতে পারছেন না। কিছু রোগি ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে। আবার গরিব রোগিরা অপেক্ষা করছে। তবে এখন আগের চেয়ে অপারেশনের সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে। এসব কারণেই হয়তো সাধারণ রোগী বাড়তে পারে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী জানান, এটা প্রাকৃতিক একটি বিষয়। করোনাকালে জরুরি না হলে হাসপাতালে আসে নি মানুষ।
রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, নানা ধরনের রোগ নিয়ে রোগীরা এখন হাসপাতালে আসতে শুরু করেছে।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, করোনার সংক্রমণ কমেছে। যে হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছিলো তাতে মনে হচ্ছিলো আর কিছুদিন বাড়লে হাসপাতালে হয়তো রোগি ভর্তি করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও জানান, করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমন কমেে গেছে। তাই সাধারন রোগী বাড়ছে। সামনে আরও বাড়তে পারে। সাধারণ রোগি বৃদ্ধির পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। এর কারনে হাসপাতালে টিকেট কাউন্টারে জনবল বাড়ানো হয়েছে। মেডিসিন বিভাগের সামনের প্রাচীরটি ভেঙ্গে উন্মুক্ত করা হয়েছে। রোগিদের বসার জন্য জায়গাও বাড়ানো হয়েছে।
আরবিসি/২৩ সেপ্টেম্বর/ রোজি