স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মহানগর পুলিশে (আরএমপি) সংযুক্ত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সুফল পাচ্ছেন মানুষ। প্রতিষ্ঠার এক বছরে প্রযুক্তি নির্ভর ও ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক পুলিশিং সেবায় সফল হয়েছে এ ইউনিট।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর এক বছরে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট আশাতিত সাফল্য পেয়েছে। একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত সদস্যদের নিয়ে আরএমপিতে সম্পূর্ণ পৃথক সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন করা হয়। পরে আরও কিছু প্রশিক্ষিত সদস্য যুক্ত হয়ে চৌকস টিম এই ইউনিটে কাজ করছে।
আরএমপি সহকারী পুলিশ কমিশনার ও সাইবার ক্রাইম ইউনিট প্রধান উৎপল কুমার চৌধুরী বলেন, সাইবার অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরনসহ গ্রেফতারে সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করা হয় এ ইউনিট। এতে ক্লু-বিহিন ঘটনা উদঘাটন, অপরাধী শনাক্তকরন ও তাদের গ্রেফতারে সহায়তা করে আসছে।
তিনি জানান, ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে সংঘটিত অপরাধ মুলত: সাইবার অপরাধ। প্রতিষ্ঠার পর গত এক বছরে রাজশাহী নগর ছাড়াও আশেপাশের প্রায় ৩৬০ টি ফেইসবুক সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নারীদের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ছবি/ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল, ফেইসবুকে ভুয়া একাউন্ট তৈরি করা, সোসাল মিডিয়ায় বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছেড়ে দিয়ে মানহানি করা, ফেইসবুক একাউন্ট হ্যাকড করা, বিভিন্ন ভুয়া মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পর্ণছবি ও ভিডিও পাঠানোসহ ফেইসবুকের মাধ্যমে সংঘটিত সকল অপরাধ। গত এক বছরে এমন ৩৬০ টি অপরাধের মধ্যে ৩৪০ টি নিষ্পত্তি করেছে আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
এছাড়া বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস মানি ট্রান্সজেকশন সিস্টেমের অপরাধ। বিভিন্ন ভুয়া অফারের মাধ্যমে পিনকোড নিয়ে বিকাশ একাউন্ট হ্যাকড, ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন, সংঘবদ্ধ অপরাধীদের বিকাশ, নগদ ও রকেট চক্রের পরিকল্পনামাফিক ফাঁদসহ অন্যান্য অপরাধ সংক্রান্ত প্রায় ৫০ টি’র অভিযোগের অনেকটায় নিষ্পত্তি করেছে এই ইউনিট।
আরএমপির সাইবার ক্রামই ইউনিট জানায়, ইমো সংক্রান্ত ৩ টি অভিযোগ এসেছে যার সব নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া পর্ণগ্রাফি সংক্রান্ত অপরাধের ৫০ টির মত অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে। এই সংক্রান্ত অপরাধের সব কয়টির অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতারে ভূমিকা রেখেছে এই ইউনিট। টিকটক/লাইকি সংক্রান্ত মোট ৫ টি অভিযোগ পাওয়া গেছে সেগুলোও আইনানূগভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
উৎপল কুমার চৌধুরী জানান, গত এক বছরে প্রায় ৩০ টির মত অপহরণের অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে যার প্রত্যেকটি ঘটনার ভিক্টিম উদ্ধারসহ আসামি শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। হারানো বা চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধারে সফলতা রয়েছে এই ইউনিটের। গত ১ বছরে ৮২০ টি অভিযোগ/জিডি এসেছে এবং প্রায় ৭৫০ টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।
আরএমপি সূত্র জানায়, বিভিন্ন অপরাধ ছাড়াও মেট্রোপলিটন এলাকার ক্লু-বিহীন ঘটনা ও সংঘবদ্ধ অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চলছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট। আরএমপি’র গঠিত সাইবার ক্রাইম ইউনিট বর্তমানে অপরাধ দমনে ৯৩ ভাগ সফল হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট বাংলাদেশের সকল ইউনিটের মধ্যে সর্বপ্রথম কিশোরদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে। যেখানে রাজশাহী মহানগর এলাকার প্রায় ৫০০ জনের মত কিশোরের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশিং সেবার অন্যতম বহুল তথ্য সম্বলিত ‘হ্যালো আরএমপি’ এ্যাপস সাইবার ক্রাইম ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। এই এ্যাপস’র মাধ্যমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল তথ্য সহজেই মিলছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২২৪ টির মত অভিযোগ এই এ্যাপস এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
এছাড়া রাজশাহী মহানগর এলাকার সার্বিক আইনশৃংখলা মনিটরিং, বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে এ ইউনিট। রাজশাহী মহানগরীর প্রায় ৫০০ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নজরদারি করছে এ ইউনিট। ফলে নগরে কমে গেছে অপরাধ। রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার জঙ্গি ও রাষ্ট্র বিরোধীদের শনাক্তসহ অন্যান্য সকল অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরন ও গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চলছে।
আরএমপি আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করে চলেছে সরকার। পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পুলিশ বদ্ধ পরিকর।
আরবিসি/১৮ সেপ্টেম্বর/ রোজি