আরবিসি ডেস্ক : পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাবনা সদর উপজেলার পদ্মা নদীতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ইতোমধ্যে ২০টি পরিবারের বাড়িঘর চলে গেছে নদীর গর্ভে। আরও শতাধিক পরিবার রয়েছে ভাঙন আতঙ্কে।
পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাবশালী মহলের অবৈধভাবে বালু তোলাই পদ্মার এই তীব্র ভাঙনের কারণ।
পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের আড়িয়াল গোয়ালবাড়ি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মায় তীব্র স্রোত। আর সেই স্রোতের টানে নদীর পাড় ভেঙে পড়ছে। নদীর পাড়ে নিজের শূন্য ভিটায় আনমনা হয়ে বসে আছেন তিন সন্তানের জননী হেলেনা বেগম। নিজের ঘরবাড়ি না থাকায় পাঁচ বছর ধরে পদ্মা নদীর পাড়ে অন্যের জমিতে বসবাস করছিলেন। কিন্তু এবছর পদ্মার ভাঙন কেড়ে নিয়েছে তার সে আশ্রয়টুকুও। তার দু’চোখে এখন শুধুই অন্ধকার। বর্তমানে অন্যের বাড়িতে থেকে কোথায় যাবেন, কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
শুধু হেলেনা খাতুনই নয়। তার মতো ওই গ্রামে প্রায় ২০টি পরিবারের একইচিত্র। বসতভিটাসহ সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে তাদের। পদ্মার ভাঙনে দিনকে দিন ছোট হয়ে আসছে গ্রামের মানচিত্র। এমন অবস্থায় কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা। ভাঙনের দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে আরো অন্তত শতাধিক পরিবারের।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে এই নদী ভাঙন। পাশাপাশি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হেলেনা খাতুন বলেন, আমার নিজের জমি নাই। অন্য মানুষের জমিতে পাঁচ বছর ধরে বসবাস করতেছি। তাও আমার ঘরবাড়ি সব ভাঙনে চইলে গেল। এহন আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নাই। আপনারাই ব্যবস্থা কইরে দেন। আছিয়া খাতুন বলেন, সব ভাইঙে চুরে গাঙে গেছে। আমরা রাত ভইরে পওর পারতিছি। আমাগারে জমিজমা কিচ্ছু নাই। দিন আইনে দিন খাই।
ওমর আলী বলেন, আগে নদীর মাঝখানে ছিল বসতভিটা। ভাঙতে ভাঙতে অনেক দূরে সরে এসেছে গ্রামের অবস্থান। এভাবে চলতে থাকলে তো গ্রামের চিহ্ন কিছুই থাকবে না। আমিরুল ইসলাম, সালেক আলী বলেন, নদী থেনে প্রভাবশালীরা বালু তুলতিছে মেলাদিন ধইরে। যার কারণে নদী ভাঙনও বেশি। তাগারে বাধা দিবি কিডা। বালু তোলা বন্ধ না হলি আরো একশডা পরিবার ভাঙনে হারায়া যাবি।
পাবনা সদর আসনের সাংসদ গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। মূলত বালু উত্তোলনের কারণেই নদী ভাঙন বেড়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। আর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের কিভাবে পূনর্বাসন করা যায়, সেটি নিয়েও আলোচনা চলছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি পরিচালক (ভূমি ও রাজস্ব) মোশারফ হোসেন বলেন, ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য তাদের একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। তার আলোকে নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে শিগগিরই কাজ শুরু করা হবে।
আরবিসি/১৭ সেপ্টেম্বর/ রোজি