• রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩১ অপরাহ্ন

শেয়ার বাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

Reporter Name / ৯৬ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : ২০১০ সালের ধসের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ার বাজার। শুধু ঘুরে দাঁড়ানো নয়, শেয়ার বাজারে উত্থানের পাশাপাশি একাধিক রেকর্ডও হয়েছে। বাজারের মূলধন ও মূল্যসূচক গত সপ্তাহে আরও উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। প্রধান মূল্যসূচক ৭ হাজার পয়েন্ট ছড়িয়েছে। যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এদিকে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগও বাড়ছে। ২০১০ সালের মতো কোনও ব্যাংক যাতে বিপদে না পড়ে, সেজন্য শেয়ার বাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এরই মধ্যে শেয়ার বাজারে নির্ধারিত সীমার বেশি বিনিয়োগ করায় বেসরকারি খাতের এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংককে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করায় ব্যাংকটিকে জরিমানা করা হয়েছে। গত জুলাই মাসে এনআরবিসি ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৫ আগস্ট ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়ে জানায়, তারা সীমা লঙ্ঘন করে বিনিয়োগ করেছে। এ জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না—সেই ব্যাখ্যা চেয়ে সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে।

এদিকে শেয়ার বাজারে বিশেষ তহবিলের টাকা নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করায় আরও ১২ ব্যাংককে সতর্ক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, আইনে বলা আছে একটি ব্যাংক শেয়ার বাজারে কত টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। সীমার বেশি বিনিয়োগ করেছে এনআরবিসি। প্রথমে তাদের কাছ থেকে জবাব চাওয়া হয়েছিল। তাদের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে। সীমার বেশি যাতে বিনিয়োগ না করে , সেজন্য অন্য ব্যাংকগুলোকেও বলা হয়েছে।

জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী শেয়ার বাজারে কোনও ব্যাংকের বিনিয়োগ ওই ব্যাংকের আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।

জানা গেছে, ২৫ শতাংশ পর্যন্ত লেনদেন করার সুযোগ থাকলেও ব্যাংক খাতের গড় বিনিয়োগ গত জুন শেষে ছিল ১৯ শতাংশ। শেয়ার বাজার গতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোকে এই সীমার বাইরে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত তহবিল গঠন করে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২৯ ব্যাংক মিলে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

এছাড়া ১২টি ব্যাংক নির্ধারিত শেয়ারের বাইরে বিনিয়োগ করেছে। এ জন্য সেই ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এসব ব্যাংকের সার্বিক বিনিয়োগ চিত্র খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ধারণা করা হচ্ছে, সরকারি প্রণোদনার ঋণের একটি অংশও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জুলাই থেকে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনার প্রভাব মোকাবিলায় সরকারি প্রণোদনার কম সুদের ঋণের একটি অংশ পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল খাতে চলে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে ওইদিন সব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া প্রণোদনার আওতায় ঋণের ব্যবহারসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে পরে আরও একটি চিঠি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ঋণের সঠিক ব্যবহার যাচাইয়ের জন্য মাঠপর্যায়ে পরিদর্শনের সিদ্ধান্তও নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে তারল্য সরবরাহ কমাতে ব্যাংকে থাকা অলস অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে তুলে নিতে শুরু করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এক বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজার যে উল্লম্ফন হয়েছে, তাতে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এই ঝুঁকি নিরসনে ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে একদিকে বিনিয়োগ চিত্র খতিয়ে দেখছে, অন্যদিকে বাজার থেকে টাকা তুলে তারল্য সংকোচনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত তিন দিনে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিপুল বিনিয়োগ ছিল পুঁজিবাজারে। সে সময় আইনি সীমা লঙ্ঘন করে অধিকাংশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে হঠাৎ করেই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা শুরু করলে ধস নামে পুঁজিবাজারে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন সংশোধন করে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমায় পরিবর্তন আনে। সংশোধনের ফলে ব্যাংকগুলোকে মোট দায়ের পরিবর্তে রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে, যা সাবসিডিয়ারিসহ সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ।

এই সংশোধনীর পর ধস নামা এই পুঁজিবাজার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে।

এরপর ২০২০ সালের এপ্রিলে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাজারের বেশ কিছু সংস্কার করা হয়। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক, নিজ কোম্পানিতে পরিচালকদের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়া লোকসানি ও উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলো পুনর্গঠনের উদ্যোগ, শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন ঋণের অনুপাত বাড়ানোর উদ্যোগ দীর্ঘদিন মন্দায় থাকা পুঁজিবাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

এ প্রসঙ্গে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের উত্থান নিয়ে সার্বিকভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অতিমূল্যায়িত হয়েছে। এগুলোর বিষয়ে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে।

আরবিসি/১৪ সেপ্টেম্বর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category