স্টাফ রিপোর্টার : স্কুল খোলার অপেক্ষায় এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে দীর্ঘ ঘরবন্দি শিশুরা। তবে এবার স্কুল খোলার খবরে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে রাজশাহীতেও।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল ১২ সেপ্টেম্বর খুলবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সকল স্কুল। এরই মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর জ্ঞান, আনন্দ ও বন্ধুত্বের দরজা উন্মুক্ত হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের পর থেকে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বেশ উচ্ছ্বসিত। স্কুলের মাঠে দৌড়-ঝাপ, খেলাধুলা ও দুষ্টুমিতে ফিরতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
তবে করোনা টিকা ছাড়া দীর্ঘ দিন পর স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কাও রয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। এমন শঙ্কার মধ্যেই রাজশাহী জেলার ১ হাজার ৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে।
অভিভাবকরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশের একেবারে প্রান্তিক অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের মত জনবহুল দেশে টিকা নিশ্চিত ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে মহামারি আরও প্রকট হতে পারে। কারণ আমাদের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। অথচ করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
তারা বলছেন, স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেক ছোট, তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। এসব না করতে পারলে শিশুদের মধ্যে দ্রুতই করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই স্কুলের সকল স্টাফের মধ্যে টিকা নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার সকল ব্যবস্থা সম্পূর্ণ না করা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তে ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে তারা স্কুল খোলার ব্যাপারে একমত। এছাড়া শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারটিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহী মহানগরীর ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্কুলের মাঠ, ক্লাস রুম, ও আশপাশ পরিস্কার করা হয়েছে। তবে স্কুলের বারান্দায় পানির ট্যাপ, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি। মহানগরীর বুধপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সব ক্লাস রুম ধোয়ামোছার কাজ শেষ হয়েছে। পানি শুকাতে ফ্যান চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পানির ট্যাপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান, মাস্ক ও তাপমাত্রা মাপার মেশিন কেনা হয়েছে।
স্কুল প্রধানরা বলেন, তারা ইতিমধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটা সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলো দ্রুত শেষ করা হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত পানির ট্যাপ স্থাপন করার কাজ চলমান রয়েছে।
নগরীর বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকে আমার প্রস্তুতি নিচ্ছি। দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় শ্রমিক দিয়ে পুরো বিদ্যালয় চত্বর ও চারপাশ পরিস্কার করেছি। সরকার পরিকল্পনা করছে প্রত্যেক শ্রেণির এক-একদিন করে ক্লাস নেওয়ার। প্রতিষ্ঠানে অনেকগুলো ক্লাস রুম রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী এক বেঞ্চে বসবে। এভাবে দুই থেকে তিনটি রুমে তাদের ক্লাস করানো হবে। সেই সঙ্গে মাস্ক পরা ছাড়াও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
মহানগরীর উপশহর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ক্লাসরুম পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কর্মীরা। স্কুলের শিক্ষকরা জানান, তাদের তাপমাত্রা মাপার মেশিন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাস্ক সরবারহ করা হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ভিন্ন চিত্র দেখা যায় মহানগরীর ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে, সেখানে করোনা টিকা কেন্দ্র থাকায় মানুষের দীর্ঘ লাইন। তবে স্কুলে প্রবেশের গেটের পাশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাত ধোয়ার বেসিনে থাকা তিনটি পানির ট্যাপের মধ্যে একটি ভাঙ্গা রয়েছে। অফিস বন্ধ। কোনো শিক্ষক নেই।
স্কুল খোলার বিষয়ে মেহেরচন্ডী এলাকার অভিভাবক ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অনেক ছোট। তাদের এখন সেই জ্ঞান হয়নি, যে তারা একে অপরের সঙ্গে মিশবে না, খেলাধূলা করবে না। এতে তাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশ থাকছে। অন্যদিকে তাদের টিকা দেয়া হয়নি। ফলে এমন সিদ্ধান্তে শিশুদের কিছুটা ঝুঁকিতেও ফেলা হচ্ছে। তাদের সুরক্ষার জন্য সকল বিষয় সম্পূর্ণ করে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত আরও বেশি ভালো হত।
উপশহর মডেল স্কুলে মেয়েকে নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে এসেছিলেন হায়দার রহমান। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে লেখাপড়ার বিষয়টি ভুলতে বসেছে। তারা বাড়িতেও পড়াশোনা করেনা সেভাবে তবে অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়টি কিছুটা পড়াশোনার মধ্যে রেখেছে। স্কুলে গিয়ে ক্লাস করার আগ্রহ এখনো তাদের মাঝে আছে। আজ মেয়ে স্কুলে এসে আর যেতে চাইছিলো না। কয়দিন পর স্কুল খুলবে স্যারে কাছে এটি শুনে বাড়িতে আসতে রাজি আমার মেয়ে।
রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষক টিকা নিয়েছেন। বাকি পাঁচ শতাংশ মাত্র বাঁকি আছেন। যাদের মধ্যে অনেকে সন্তানসম্ভবা, শিশুরা দুধ পান করে ও অসুস্থ থাকায় টিকা নিতে পারেনি। তাদের তালিকাও আছে আমাদের কাছে দ্রুতই তাদের টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর ১ হাজার ৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখতে প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তারা সেই মোতাবেক কাজও করেছে।
এদিকে, নির্দেশনা অনুযায়ী নগরীসহ রাজশাহী জেলার কলেজগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছে কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী সকল প্রস্তুতিই প্রায় শেষ। এরআগেও তারা কয়েকবার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। নির্দেশনার আগেই পুরো ক্যাম্পাস ও ক্লাসরুম পরিষ্কার করা হয়েছে।
আরবিসি/১১ সেপ্টেম্বর/ রোজি