স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্ত্বরের একটি গাছ কাটতে গিয়ে মারা পড়ল শতাধিক শামুকখোল ছানা। পাখির প্রতি এমন নিষ্ঠুরতায় অবাক রাাজশাহীর পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, গাছে আশ্রয় নেয়া পাখিদের বিতাড়ন করতে এমন নিষ্ঠুরতায় ব্যাথিত তারা।
দেশে এমনিতেই কমে যাচ্ছে পাখি। শামকুখোল প্রজাতির পাখিদের বসবাসের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় পাখিদের বসবাস উপযোগী গাছপালা কেটে আশ্রয়হীন করা হচ্ছে তাদের। মানুষের এমন নিষ্ঠুর আচরণের পরও এ পাখিরা ঘুরে ফিরে নতুন আশ্রয় খুঁজে সংগ্রাম করেই টিকে রয়েছে।
তবে এবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনের গাছ কাটায় সেখান থেকে পড়ে শতাধিক শামুকখোল পাখির বাচ্চা মারা গেছে। শনিবার বিকেলের এ ঘটনায় অনেকে হতবাক হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতালের সামনে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। আর তাই সেখানে কাটা হয়েছে দু’টি অর্জুন গাছ। সেই গাছ থেকেই পড়েছে পাখির বাচ্চাগুলো। এ সময় বেশিরভাগ বাচ্চা গাছ থেকে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। আর যেগুলো বেঁচে ছিল সেগুলোকে জবাই করে নিয়ে গেছেন নির্মাণ শ্রমিক ও স্থানীয়রা।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হল মোড় থেকে আসা এক রোগীর স্বজন খাইরুল ইসলাম বলেন, সব মিলিয়ে শতাধিক পাখির বাচ্চা মাটিতে পড়ে গেছে। ২০-২৫টি পাখির বাচ্চা নির্মাণ শ্রমিকদের জবাই করতে দেখেছেন তিনি। দুপুরের দিকে অনেক রোগীর স্বজনরাও কিছু পাখির বাচ্চা নিয়ে গেছেন। পাখিগুলো গাছ থেকে পড়ার পর ছটফট করছিল। সময়মতো উদ্ধার করা গেলে এগুলোকে বাঁচানো যেত।
জানা যায়, প্রায় ৮ বছর আগে শামুকখোল পাখি নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ও আশপাশের গাছগুলোতে বাসা বাঁধে। এখানে শামুকখোল প্রজাতির কয়েক হাজার পাখি নিরাপদেই ছিল। ২০১৯ সালে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির নির্মাণকাজ শুরু হলে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়। এতে পাখিগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তবে খুব দ্রুতই নতুন আশ্রয় হিসেবে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের গাছগুলোকে খুঁজে নেয়। এখানে এসেও হারাতে হয় বাসস্থান। ২০২০ সালে হাসপাতালের গাছের ডালপালা কাটার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয়বারের মতো আশ্রয় হারিয়েও রাজশাহী ছাড়েনি শামুকখোলের দল। তারা দ্রুতই হাসপাতালের পূর্ব পাশের রাস্তার পাশের গাছগুলোতে আশ্রয় নেয়।
সম্প্রতি হাসপাতালের পুরনো সীমানা প্রাচীর ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সময় প্রায় (পূর্ব পাশের) অর্ধশত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তাই পাখিরা এবার আশ্রয় নিয়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে। বার বার আশ্রয়হীন হওয়ার পরও পাখিগুলো শহর ছেড়ে যায়নি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর নম্বরে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
রাজশাহী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী বন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে রামেক থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। বিস্তারিত জেনে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরবিসি/০৫ সেপ্টেম্বর/ রোজি