স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাঘায় দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে প্রায় আড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দুই কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) খাল খনন প্রকল্প। স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই খাল খনন প্রকল্পের উদ্ধোধনের পর ৮০ ভাগ খনন কাজ শেষ হলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর আদালতে মামলা করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এই প্রকল্পটি।
ফলে উপজেলার নওটিকা, আরিফপুর, বেলগাছি, বারখাদিয়া, হিজোল পল্লী ও তেপুখুরিয়াসহ ৬ টি বিলে জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে প্রায় ৩ শ’ বিঘা জমির ধান ও অন্যান ফসল। সম্প্রতি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে কৃষকদের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাজুবাঘা ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, উপজেলার মশিদপুর পদ্মা নদীর মুখে রয়েছে একটি স্লুইচ গেট। সেখান থেকে সরকারি ভাবে ক্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে এক সময় উপজেলার ৬ টি বিলে পানি প্রবেশ করানো হতো। ফলে উপকৃত হতেন কৃষকরা। অনেকেই এই খালটির নামকরণ করে ছিলেন চন্দনা নদী। পরবর্তীতে পদ্মার রূপ পরিবর্তন হওয়ায় কতিপয় প্রভাবশালী খালের কয়েকটি স্থানে মাটির বাধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হন কৃষক। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ দুই কোটি টাকা ব্যয়ে পুরাতন ওই খালটি সংস্কার কাজ শুরু করেন। এর ফলে কৃষকরা আশার আলো খুজে পান। তবে প্রভাবশালীরা আবারও সেখানে বাধা সৃষ্টি করে। তাদের জমি খালের ভেতরে চলে যাওয়ার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দেন।
মামলার বাদি তমেজ উদ্দিন, মোজাহার হোসেন, আবুল কাশেম ও রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের রের্কডকৃত দখলীয় সম্পত্তির উপর প্রায় ৩৫ বছর আগে আগেও খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্দ্যোগ নেয়। ওই সময় আমাদের সম্পত্তি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর পর তারা খাল খনন বন্ধ রাখেন। কিন্তু বর্তমান সরকার আমলে এসে স্থানীয় সাংসদের সুপারিশে একটি প্রকল্প বরাদ্দ হয়। এটি রক্ষা করতে আমরা পৃথক ভাবে আদালতে ৪টি মামলা দায়ের করি।
প্রকল্পের স্থানীয় তত্বাবধায়ক ও উপজেলা আ’লীগের নেতা মহিউল হাসান টনি বলেন, যারা রেকর্ড বলে মামলা করেছেন তারা ১৯৭৪ সালের রেকড়ে অংশিদার হয়েছেন সত্য। তবে ১৯২২ এবং ১৯৬২ সালে এটি খাস ক্ষতিয়ান ভুক্ত ডোবা-নালা হিসাবে চিহ্নিত। তিনি বলেন, শুকনো মৌসুমে বিলে পানি রাখা এবং বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি নিস্কাশনের জন্য স্থানীয় সাংসদের কাছে থেকে সুপারিশ নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে গত প্রায় আড়াই বছর আগে ৭টি ভাগে জায়গা ভাগ করে খাল খনন কাজ শুরু করা হয়। ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে আদালতে মামলা দেয়ায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও নওটিকা গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তার ৫ বিঘা জমির ধানসহ ওই এলাকার প্রায় ৩শ বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এর একটিই কারণ অপরিকল্পিত ভাবে বিলের মধ্যে পুকুর খনন এবং বরাদ্দকৃত ড্রেনের কাজ বন্ধ করে দেয়া।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন, এই এলাকায় নদীর সঙ্গে বিলকে সম্পৃক্ত করে আড়াই বছর আগে সরকারিভাবে খাল খনন শুরু করা হয়েছিল। মোট ৮ কিলোমিটার দৈঘ্যর মধ্যে ৬ কিলোমিটার খনন শেষে হয়েছে। পরে এনিয়ে আদালতে মামলা করায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, জনস্বার্থে এই খালটি সম্পন্ন করা খুবই জরুরী
বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, সরকার জনগণ এবং দেশের কল্যানে অনেক কিছুই করে থাকেন। এখানে ৮ কিলোমিটার ড্রেন নির্মান প্রকল্পের মধ্যে ২ কিলোমিটার বন্ধ রয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চাইলে কৃষকদের কিঞ্চিত ক্ষতিপুরণ দিয়ে বাঁকি ড্রেন সম্পুর্ণ করলে বিলের পানি নিস্কাশন হবে। পানির নিচে আর কখনোই ধান তলিয়ে থাকবে না।
আরবিসি/০৩ সেপ্টেম্বর/ রোজি