• সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন

যেসব অস্পষ্ট লক্ষণ ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়

Reporter Name / ১৪৫ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : পেটে ব্যথা কিম্বা কাশি- অনেকদিনের চিকিৎসার পরেও যদি সেরে না ওঠে, তাহলে সেটা ক্যান্সারের উপসর্গ হতে পারে এবং অনতিবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে- বলছেন ইংল্যান্ডে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএসের কর্তাব্যক্তিরা।

তারা বলছেন, এসব উপসর্গ উপেক্ষা করে চিকিৎসা গ্রহণে বিলম্ব করার কারণে হাজার হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
ইধহমষধফবংয চৎধঃরফরহ
আন্তর্জাতিক এক হিসেবে দেখা গেছে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে বছরে এক কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ক্যান্সারের এসব লক্ষণ বা উপসর্গ সম্পর্কে লোকজনের আরো বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে ক্যান্সার যদি প্রাথমিক স্তরে শনাক্ত করা যায় তাহলে খুব দ্রুত এবং খুব সহজে সেই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব।

ব্রিটেনে একজন ক্যান্সার চিকিৎসক এবং সাউথেন্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের কনসালটেন্ট ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “একেবারে শুরু দিকে শনাক্ত করা গেলে সব ক্যান্সারই সারিয়ে তোলা সম্ভব। যদি অনেক পরে ধরা পড়ে, তখন আর সারানো সম্ভব হয় না। উপসর্গগুলোর ব্যাপারে সবাই একটু সচেতন হলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।”

কিন্তু ব্রিটেনে এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই এসব উপসর্গকে গুরুত্বের সাথে নেন না। ক্যান্সারের সাধারণ যেসব উপসর্গ আছে সেগুলোর ব্যাপারেও অনেকে সচেতন নন। এসব উপসর্গ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাও নেই।

অনেক সময় দেখা যায় একজন ব্যক্তি হয়তো সুস্থ জীবন যাপন করছেন, কিন্তু হঠাৎ করেই দেখা গেল যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেল তার ক্যান্সার হয়েছে। এর মধ্যে তার কিছু লক্ষণও হয়তো শরীরে দেখা দিয়েছিল কিন্তু সেগুলো তিনি বুঝতে পারেননি, অথবা গুরুত্ব দেননি।

পরে দেখা গেল বিলম্ব করার কারণে ক্যান্সার ইতোমধ্যে তার শরীরে অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। তখন চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সারিয়ে তোলা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে।

চিকিৎসকরা বলছেন, উপসর্গ যদি ছোটখাটোও হয়, তার পরেও সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা কিছু কিছু ক্যান্সার শনাক্ত করা কঠিন এবং অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই এবিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। কিন্তু এর মধ্যেই অনেক সময় পার হয়ে যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বর্তমানে ডাক্তার বা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে আর একারণেই ক্যান্সারের উপসর্গ বা লক্ষণের ব্যাপারে এখন সতর্ক হওয়া আরও বেশি জরুরি।

উপসর্গ
কিছু কিছু উপসর্গ রয়েছে যেগুলো সাধারণত সব ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। বিশেষ করে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার পর এসব উপসর্গ মোটামুটি একই রকমের হয়ে থাকে।

ক্যান্সার চিকিৎসক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “এসবের মধ্যে রয়েছে কোনও কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া, অনেকদিন ধরে খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি। তারপর সব পেটের ক্যান্সারের বেলায় একটা সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে পেটে ব্যথা। বাওল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে তিন থেকে চার সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া।”

“আবার কিছু কিছু উপসর্গ আছে একবার দেখা দিলেই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। যেমন প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া যা ব্লাডার ক্যান্সারের একটি লক্ষণ যা কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়,” বলেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গলা, পাকস্থলি, বাওল, প্যাংক্রিয়াটিক, ওভারি- এধরনের অ্যাবডোমিনাল ক্যান্সার এবং ইউরোলজিক্যাল যেসব ক্যান্সার আছে- যেমন প্রোস্টেট, কিডনি এবং ব্লাডার- এসব ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো অনেকটা আড়ালেই থেকে যায়।

সাধারণভাবে এসব ক্যান্সারের যেসব উপসর্গ দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে:

১. কয়েক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে পেটের ভেতরে অস্বস্তি
২. অনবরত ডায়রিয়া
৩. সবসময় অসুস্থ বোধ করা
৪. প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত

চিকিৎসকরা বলছেন, এসব উপসর্গের কোনও একটি তিন সপ্তাহ কিম্বা তার চেয়েও বেশি সময় স্থায়ী হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

এছাড়াও আরও কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন- যেমন পেটে বাড়তি কোনও মাংসপিণ্ড বা লাম্প অথবা মেনোপোজের পরেও রক্ত যাওয়া, বিনা কারণে ওজন কমে যাওয়া- এসবও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যেসব উপসর্গকে রোগীরা তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না তার মধ্যে রয়েছে:

১. তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি, কোভিড ছাড়া
বারবার চেস্ট ইনফেকশন বা বুকে সংক্রমণ
২. কাশির সঙ্গে রক্ত
৩. ক্লান্ত বোধ করা, শক্তি না পাওয়া কিম্বা সবসময় দুর্বল বোধ করা

কত আগে দেখা দেয় উপসর্গ
এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনও উত্তর নেই। শরীরের একেক অঙ্গের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেওয়ার এই সময় একেক রকমের।

আবার অনেক উপসর্গ আছে অস্পষ্ট, যেগুলো থেকে বোঝার কোনও উপায় নেই। একারণে এসব লক্ষণের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আরও বেশি জরুরি।

“সব অঙ্গের ক্যান্সারের উপসর্গ যে অনেক আগে থেকেই দেখা যাবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সে কারণে অস্পষ্ট লক্ষণগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। যেমন কাশি হলে আমরা তেমন একটা গুরুত্ব দেই না। কিন্তু কাশিটা যদি দুই তিন সপ্তাহ ধরে থাকে, অথবা বার বার ফিরে ফিরে সংক্রমণ হচ্ছে, তাহলে সেটা লাং ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে,” বলেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ।

কিছু ক্যান্সার আছে যেগুলোর লক্ষণ দ্রুত দেখা যায় না। অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ার পরেই কেবল উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে।

উদাহরণ হিসেবে প্যাংক্রিয়াটিক ক্যান্সারের কথা বলা যেতে পারে। এই ক্যান্সার প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়ার ঘটনা খুবই কম।

“অন্য কোনও কারণে সিটি স্ক্যান করার সময় হয়তো ধরা পড়লো এবং এটি যখন ধরা পড়ছে তখন সেটি অনেক অ্যাডভান্সড স্টেজে চলে গেছে,” বলেন ডা. আহমেদ।

তবে তিনি জানান, কিছু কিছু ক্যান্সার যেমন বাওল ক্যান্সার, ব্লাডার ক্যান্সার, লাং ক্যান্সার এগুলো একটুখানি সতর্ক হলে আগেভাগেই শনাক্ত করা সম্ভব।

কখন সতর্ক হওয়া জরুরি
কিছু কিছু উপসর্গ আছে সাধারণ অসুখ-বিসুখের ক্ষেত্রেও যেগুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে কাশি কিম্বা জ্বর। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও এই দুটো খুব সাধারণ উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়।

কিন্তু এসব সাধারণ উপসর্গ থেকে ক্যান্সারের লক্ষণকে আলাদা করা যায় কীভাবে কিম্বা কখন একটু বেশি সতর্ক হতে হবে?

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “অনেক দিন ধরে যদি কাশি থাকে, দুই তিন সপ্তাহেও যাচ্ছে না, আর কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও সারছে না, অথবা কারো ঘন ঘন চেস্ট ইনফেকশন হচ্ছে, তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে যে এটা ক্যান্সারের লক্ষণ কীনা।”
ওজন কমে যাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে। নানা কারণে ওজন কমতে পারে। থাইরয়েডের কারণেও অনেক সময় ওজন কমে যায়। অন্যান্য রোগের কারণেও কমতে পারে।

“কিন্তু ওজন কমে যাওয়ার পেছনে যদি কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া না যায়, এর কোনও ব্যাখ্যা না থাকে, তখন অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত,” বলেন ডা. আহমেদ।

চিকিৎসায় সাফল্য
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সারের সাধারণ কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকলে রোগীরা হয়তো অকালেই তাদের মৃত্যু ঠেকাতে সক্ষম হবেন। আর একারণে এসব উপসর্গকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া খুবই জরুরি।

ব্রিটেনে ক্যান্সার চিকিৎসক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে অধিকাংশ ক্যান্সারই সারিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু ক্যান্সার ছড়িয়ে গেলে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা কঠিন। তখন হয়তো আমরা ওই ক্যান্সারকে শুধু নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করি।”

এ কারণে ক্যান্সার যতো আগে ধরা পড়বে, ততই ভাল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন ক্যান্সারের চিকিৎসায় সফলতার হার কতখানি সেটা কোন অঙ্গের ক্যান্সার তার ওপরেও নির্ভর করে।

লাং ক্যান্সার আগে ভাগে শনাক্ত করা গেলে এর চিকিৎসায় সফলতার হার ৬০% থেকে ৭০%।

গলার ক্যান্সারের বেলাতেও সাফল্যের হার একই রকমের। প্রোস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। সূত্র: বিবিসি বাংলা

আরবিসি/২৪ আগস্ট/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category