স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন। ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী ৫ টি গ্রামে ৯০ ফিট করে ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন প্রায় ৪ শতাধিক কৃষক। ঘর-বাড়ি স্থানান্তর করে নিয়েছেন তিনশ পরিবার।
অনেকেই ধারনা করছেন, এ ভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে অনেকের ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হবে। তবে এ মুহুর্তে হুমকির মুখে দাড়িয়ে আছে চরাঞ্চলের অবস্থিত একটি কমিউনিটি ক্লিনিক।
সরেজমিন পদ্মার চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত চকরাজাপুর ইউনিয়নের অধিন কালিদাস খালি, লক্ষ্মীনগর, চৌমাদিয়া, দিয়ার কাদিরপুর ও চকরাজাপুর এলাকা ঘুরে লক্ষ করা গেছে ভয়াবহ ভাঙ্গন চিত্র। এ ভাঙ্গনের ফলে অনেকের ঘর-বাড়িসহ হুমকির মুখে দাড়িয়ে আছে চরাঞ্চলের কিমিউনিটি ক্লিনিক। ইতোমধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়েছে টিন দিয়ে নির্মাণকৃত চকরাজাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙ্গনের ফলে এ বছর সিংহ ভাগ ক্ষতি হয়েছে আম ও খেঁজুর বাগান, পিয়ারা বাগান, কলা বাগান, বরই বাগান এবং পাট, আখ, ধানসহ নানা প্রকার সবজি ক্ষেত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতি বছরই নদী তীরবর্তী অঞ্চলে কম-বেশী ভাঙ্গনের চিত্র ফুটে উঠে। তবে অধিকাংশ লোকজন এ ভাঙ্গনের জন্য নদী থেকে বালি উত্তোলনকে দায়ি করেছেন। গত কয়েক বছরে যাদের সব চেয়ে বিশে জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেন রফিকুল ইসলাম মালিথা, আজিবার মালিথা, কুদরত আলী, হাফিজুর রহমান, নয়ন পীর, শমসের আলী, জামাল উদ্দিন, শামসুদ্দিন রেন্টু, আজাদ শেখ, গোলাম মোস্তফা, আসাদুজ্জামান, মনছুর শেখ ও বাবলু দেওয়ান।
এ দিক থেকে এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় তিনশ পরিবার তাদের ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়াও ভাঙ্গনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আব্দুল আওয়াল, করিম শেখ, মালেক মিঞা, আখের আলী, মোহাম্মদ আলী, মহাসিন শিকদার, খোকন শিকদার, রবিউল ইসলাম, খোকন মিয়া, মামুন হোসেন, করিম উদ্দিন, রশিদ খামারু, শাহালম, আলম শেখ ও আশরাফুল সহ অসংখ্য পরিবার।
নদী তীরবর্তী স্থানীয় লোকজন জানান, যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটার বাধ অরক্ষিত রয়েছে। গত ৬ বছরে পদ্মার ভাঙনে এসব এলাকার প্রায় ৫’শ বাড়িসহ ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার এবং বিজিবি ক্যাম্পসহ কয়েক হাজার বিঘা আবাদি অনাবাদি জমি চলে গেছে পদ্মার করাল গ্রাসে। এ ছাড়াও ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে এক হাজার পরিবার।
এ বিষয়ে ৩ নম্বর কালিদাসখালী চর ও চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমার ৮ বিঘা আম বাগান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এমনকি আমার বাড়িটাও হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভাঙন থেকে মাত্র ৬০ মিটার দুরে রয়েছে বাড়ি। ফলে এবার যে ভঙনের ডাক তাতে মনে হয় কালিদাসখালী ও লক্ষ্মীনগর বলে কোন চিহ্ন থাকবে না।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চার নং ওয়ার্ড সদস্য ফজলুল হক বলেন, বর্তমানে নদী ভাঙ্গনের কারনে চকরাজাপুর বলে কোন চিহ্ন নেই। আমার ওয়ার্ডের তিন ভাগের দুই ভাগ পদ্মা গর্ভে চলে গেছে। তার মতে, এবাব যে হারে ভাঙা শুরু হয়েছে তাতে আগামি এক সপ্তার মধ্যে তার ওয়ার্ডও বিলিন হয়ে যাবে।
এদিকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আনোয়ার শিকদার বলেন, গত কয়েক বছরে আমার প্রায় ৩০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডের কোন চিহ্ন নেই। এ ওয়ার্ডের ৩ শতাধিক পরিবার দুই বছরের ব্যবধানে অন্যত্র চলে গেছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, প্রতি বছর ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানুষ। তবে বর্তমানে ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, পদ্মার ভাঙ্গন রোধে বাঁধের কাজ শির্ঘই শুরু হবে। কাজ সম্পন্ন হলে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে নদী তীরবর্তী মানুষ। তারপরও ভাঙ্গনের বিষয়ে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
আরবিসি/১৪ আগস্ট/ রোজি