আরবিসি ডেস্ক: করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর লকডাউনে শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছুটির দিন শুক্রবারের চেয়ে রাস্তায় ভিড় বেড়েছে। আর এসব দেখে এক নাগরিক মনে করিয়ে দিলেন সেই প্রবাদ- ‘কাজীর গরু খাতায় আছে গোয়ালে নেই।’ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় গড়ি চাপ গত কয়েকদিনের মতোই বেশি। পাড়া মহল্লার দোকানপাটও স্বাভাবিক সময়ের মত খোলা।
করোনাভাইরাস মহামারীর দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউন জারি করা হলেও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় নয় দিন তা শিথিল করা হয়েছিল। ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে আবার লকডাউন শুরু হলেও এর মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। চলমান এই লকডাউন আগামী ১০ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার।
তবে দিন যত যাচ্ছে, রাস্তাঘাটে মানুষও তত বাড়ছে, জীবিকার তাগিদে মানুষ আর বিধিনিষেধ মানতে চাইছে না। ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, সাত মসজিদ রোড, আদাবর, শিয়া মসজিদ এলাকায় রিক্সা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বেশ বেড়েছে। শুক্রবার ছুটির থাকায় চলাচল কম ছিল। তবে শনিবার তা গত দিনের চেয়ে বেড়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজ প্রিন্ট করতে ঘর থেকে বের হওয়া সিদ্দিক বলেন, “সব দোকানপাট খোলা। মার্কেটগুলো কৌশল করে সার্টার বন্ধ রাখে। বিকল্প সিঁড়ি আছে। সেদিক দিয়ে মার্কেটে ঢুকে প্রিন্টের কাজ সেরে নেব।”
শিয়া মসজিদ বাজারে ক্রেতা আলী আহমেদ বলেন, “বাজারে বোঝার উপায় আছে যে লকডাউন চলছে। এই লকডাউন মানে এখন নামে। কাজীর গরুর মত- খাতায় আছে, গোয়ালে নেই। এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া উচিত।” মতিঝিল শাপলা চত্বরের কাছে ফুটপাতে জিন্স প্যান্ট বিক্রেতা শফিক বলেন, “লকডাউনের কড়াকড়ি কমে গেছে। দেখেন, সকাল থেকে মতিঝিল সড়কে প্রচুর প্রাইভেট কার এসে রাস্তার দুই ধারে পার্কিং করা। এখানকার প্রতিষ্ঠানে এখন পুরোদমেই কাজ-কর্ম চলছে।”
“আগে মতিঝিলের ফুটপাত ছিল ফাঁকা। গত এক সপ্তাহ যাবত দেখছি, ফুটপাতে মানুষজনের হাঁটাচলা বেড়ে গেছে। এই মতিঝিল পাড়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্যাররা আমার কাস্টমার। তাদের সাথে এখন প্রতিদিনই দেখা হয়।” শান্তিনগরের বাজারে কাছে ন্যায্য মূল্যের ডাল, তেল, চিনি বিক্রির ট্রাকের সামনেও ভিড় রয়েছে মানুষের।
লাইনে দাঁড়ানো ফাতেমা বেগম বলেন, “লকডাউন শেষ হলে ভিড় বেড়ে যাবে। সেজন্য সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি।” ফকিরের পুল, আরামবাগের মোড়ে মোড়ে মানুষজনের উপস্থিতিও বেড়েছে। কেউ এসেছেন বাজার করতে, কেউ বা অফিস যাচ্ছেন।
ফকিরেরপুল গরম পানির গলির বাসিন্দা রেজাউল হক বলেন, “যে সংখ্যার মানুষজন রাস্তার ফুটপাতে দেখা যায়, রাস্তায় প্রাইভেট যেভাবে বেড়েছে তাতে এই লকডাউন দেওয়ার কোনো মানে নেই। আপনি দেখেন বাজারে কত মানুষজন। তাদের অনেকের মু্খরে মাস্ক গলায় ঝোলানো। মানুষজন এখনও সচেতন হচ্ছে না। এটা আমাদের সকলের জন্য বিপদ।” রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরব রয়েছেন। কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটর সাইকেল নিয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে বের হয়েছেন কিনা তারা জানতে চাইছেন।
নীলক্ষেতের অধিকাংশ দোকান বন্ধ থাকলেও লেপ তোষক বিক্রির কয়েকটি দোকান খোলা দেখা যায়। কাটাবন মার্কেটের উল্টোদিকে ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকানে সাভার থেকে কাঁচামাল নিয়ে আসা একটি কভার্ড ভ্যানের হেলপার আবুল হোসেনকে মাস্ক ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে নাস্তা করতে বের হয়েছেন বলে মাস্ক পরতে পারেননি। সব সময় তিনি মাস্ক পরেন।
তার ঠিক পাশেই কয়েকটি ব্যাংকের বুথের নিরাপত্তা কর্মী কাসেম আলী ও জিল্লুর রহমানকেও মাস্ক ছাড়া দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। জিল্লুর বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারনে মাস্ক থাকলেও তিনি পরেননি। শনিবার কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে মিরপুর। এলাকার দোকানপাট খুলেছে, মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় কারণে রিকশাচালকরাও ব্যস্ত।
সকাল থেকে পীরেরবাগ কাঁচাবাজারের অধিকাংশ দোকানপাট খোলা দেখা যায়। আগের দিনের তুলনায় রাস্তায় রিকশাও ছিল বেশি। রিকশাচালক আবিদুল জানান, শুক্রবারের তুলনায় শনিবার বেশি মানুষ রাস্তায় নেমেছে। যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে বেশি। মিরপুরের রূপনগর, পল্লবীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের দোকানপাট খুলে সবাই ব্যবসায় বসে গেছেন। সাধারণ মানুষের চলাফেরা প্রায় স্বাভাবিক পরিস্থিতির মতো হয়ে গেছে। প্রধান সড়কে শুধু গণপরিবহণ ছাড়া প্রায় সব গাড়ির চলাচলে বোঝাই যাচ্ছে না দেশে লকডাউন চলছে।
আরবিসি/০৭ আগস্ট/ রোজি